কেন সংকর ব্রিড খামারের জন্য লাভজনক?
নিঃসন্দেহে সংকর ব্রিড খামারিদের জন্য লাভজনক ব্যবসার সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। কিন্তু কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের অনেকেরই অজানা। আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই ” কেন সংকর ব্রিড খামারের জন্য লাভজনক? ” অনুচ্ছেদ থেকেঃ
আলোচনার শুরুতে চলুন জেনে নেয়া যাক সংকর ব্রিড কী? উন্নত বিদেশী জাতের (যেগুলো দুধ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত) ষাঁড় এবং দেশী জাতের গাভীর মিলনের মাধ্যমে উৎপন্ন একটি উন্নত জাতের ব্রিড; তাই সংকর ব্রিড বা ক্রস ব্রিড। সংকরায়নের ফলে নতুন প্রজন্মে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে ; যে পরিবর্তন গুলো এ দেশের খামারীদের অধিক ফলনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক । উদাহরণস্বরূপ –
১) সংকর জাতের গাভী এই দেশের আবহাওয়ায় চমৎকার ভাবে খাপ খাওয়াতে পারে। কিন্তু অধিক দুধ উৎপাদন করে এমন কিছু বিদেশী জাত – হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, আয়ারশায়ার এরা আমাদের আবহাওয়াতে অসুস্থ হয়ে পড়ে, দুধ উৎপাদনও কমে যায় । ফলে খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সংকর জাতের গরুর ক্ষেত্রে এই রকম কোনো অসুবিধা নেই ।
২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন গরু খামারীদের জন্য অধিক লাভের। কারণ তারা অধিক দুগ্ধ উৎপাদন করতে পারে আবার চিকিৎসা বাবদ খরচও তুলনামূলকভাবে কম হয়। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান , আয়ারশায়ার, জার্সি এইসব গরুর অধিক দুগ্ধ উৎপাদন করলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম। সংকর জাতে এই সমস্যা থাকে না। ফলে রোগ-প্রতিরোধ বাবদ খামারীর খরচও কম হয়।
৩) উন্নত জাতের গাভীর বেশিরভাগই এদেশের আবহাওয়ার উপযোগী নয়। এছাড়া এই উপমহাদেশের যেসব পিউর ব্রিডের গরু রয়েছে সেগুলো অনেক দাম হওয়ার কারণে ছোট খামারীদের পক্ষে ওই গরুগুলো খামারে যুক্ত করা অধিকাংশ সময় সম্ভব হয় না । সংকরায়নে ওইসব উন্নত জাতের উৎপাদন বৈশিষ্ট্য গুলো ছোট খামারীরা পেয়ে যায় হাতের নাগালে।
৪) দেশী জাতের গরুর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা এমনকি বাছুরও তুলনামূলকভাবে কম । তাই কমিউনিটি সংকরায়নের ফলে দেশী ব্রিডের উন্নত সংস্করন পাওয়া যায় ; যাদের দুধ এবং বাছুর উৎপাদন ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে বেশি। ফলে খামারীরা অধিক লাভবান হয়।
৫) সংকর গরু লালন-পালন করতে খামারীদের দেশী গরুর মতোই খরচ পড়ে। কিন্তু সংকর গরুর উৎপাদন ক্ষমতাও দেশী গরুর থেকে অনেক বেশি। আবার খাবার খাওয়ানোর ঝামেলাও তুলনামূলক কম। তাই এই দেশের প্রেক্ষাপটে সংকর গরু অধিক লাভজনক।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, যতো গুড় ততো মিষ্টি। কিন্তু সংকর গরুর ক্ষেত্রে খামারীরা কম গুড়েও অধিক মিষ্টির স্বাদ পেয়ে থাকে। অর্থাৎ খরচের তুলনায় লাভ অনেক বেশি। তাই দিনে দিনে সংকর গরু এদেশের খামারীদের কাছে জায়গা করে নিয়েছে।