গোয়ালঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ
গোয়ালঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে এবং রোগ-জীবাণুর বিস্তার রোধে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একটা জায়গায় যেকোনো একভাবে গোয়ালঘর নির্মাণ করলেই তাতে আলো-বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা থাকবে এমনটা নয়। গোয়ালঘর নির্মাণের সময় খামারীদের কিছু বিশেষ দিক বিবেচনায় রাখতে হয়। যেমন – কোন দিকে মুখ করলে আলো বেশি আসবে, বায়ু ভালোভাবে চলাচল করবে ইত্যাদি।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে ” গোয়ালঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ “। আলোচনায় যা যা থাকছে-
ক. গোয়ালঘরে আলো-বাতাস সরবরাহের গুরুত্ব
খ. গোয়ালঘর কোন দিকে করবো? সব ঋতুতেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ সম্ভব কী?
গ. গোয়ালঘরের ছাদ কেমন হলে ভালো হয়?
ঘ. গোয়ালঘরের আয়তন কেমন হওয়া উচিত?
ক. গোয়ালঘরে আলো-বাতাস সরবরাহের গুরুত্বঃ গোয়ালঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে এবং রোগ-জীবাণুর বিস্তার রোধে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গরুর জাবরকাটার (Rumination) ফলে প্রচুর মিথেন গ্যাস সৃষ্টি হয়। তখন গোয়ালঘরের বাতাস বিষাক্ত হয়ে যায়, যা গরুর জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। এ বিষাক্ত মিথেন গ্যাস গরুর প্রজনন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। তাই খামার গঠনের শুরুতেই গোয়ালঘরের দরজা কোন দিকে করলে বায়ু ঠিকঠাক চলাচল করবে, ছাদ কেমন হলে ভালো হবে ইত্যাদি ব্যাপারগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।
খ. গোয়ালঘর কোন দিকে করবো? সব ঋতুতেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ সম্ভব কী? বাংলাদেশের দু’টি প্রধান ঋতু গ্রীষ্ম ও শীত। বছরের অধিকাংশ সময় জুড়েই গ্রীষ্মের প্রকটতা বিরাজ করে। এসময় ভূ-পৃষ্ঠের প্রচন্ড উত্তাপে ভারতের পশ্চিম-কেন্দ্রভাগ জুড়ে একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে বঙ্গোপসাগর থেকে একটি উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুস্রোত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উল্লিখিত নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার শীতকালে আমাদের দেশে বায়ু সাধারণত উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। কাজেই গোয়ালঘরের সেড পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা করলে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারবে।
পূর্ব-পশ্চিমে গোয়ালঘরের সেড নির্মাণের আরো একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এভাবে গোয়ালঘর নির্মাণ করলে সূর্যের আলো তির্যকভাবে পতিত হয়। অর্থাৎ আলোকরশ্মি গরুর পেছনে পড়ে। যার ফলে সূর্যরশ্মি সরাসরি গরুর প্রসাব ও গোবরের ওপর পতিত হয়। ফলে গরুর মলমূত্র সহজেই শুকিয়ে যায় এবং তা থেকে রোগ-জীবাণুর বিস্তার কম হয় ।
গেয়ালঘর উত্তর-দক্ষিণে রাখলে কোনো অসুবিধা আছে কী?
গোয়ালঘরের সেড উত্তর – দক্ষিনে লম্বা করলে সূর্যের আলো সরাসরি গরুর মুখে পড়বে। এতে একদিকে গরু যেমন অস্বস্তি বোধ করবে তেমনি গেয়ালঘর থেকে মলমূত্রের বিশ্রী গন্ধ আসবে। সাথে সাথে রোগ-জীবাণুরও বিস্তার ঘটবে।
গ. গোয়ালঘরের ছাদ কেমন হলে ভালো হয়?
গোয়ালঘরে আলো-বাতাস ঠিকভাবে আসবে কিনা তার অনেকটাই নির্ভর করে কেমন ছাদ তার উপর। গেয়ালঘরের ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ছাদ হয়ে থাকে। যেমন-
- ঢালাইঃ ইটপাথরের ঢালাই দিয়ে এ ছাদ নির্মাণ করা হয়। খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও গরমে তাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর গরুর প্রধান সমস্যা হয় মূলতঃ গরমে। আবার শীতেও কুয়াশার প্রকটতা সেভাবে প্রভাব ফেলে না।
- টিনের চালঃ অল্প খরচে গোয়ালঘর নির্মাণ করতে চাইলে টিনের চালের চাহিদা সকলের শীর্ষে থাকে। কিন্তু এর খরচ কম হলেও গ্রীষ্মে অনেক গরম আবার শীতে গেয়ালঘর অনেক ঠান্ডা থাকে। গোয়ালঘরের চালের নিচে ইন্সুলেসন দিলে এ সমস্যার সমাধান করা যায় ।
iii. প্লাস্টিকের চালঃ প্লাস্টিকের চালের সবচেয়ে বড় সুবিধা এতে সহজে মরিচা ধরে না, রোদের তাপে গরম হয় না আবার দিনের বেলায় আলো পৌছায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ফার্মের ছাদ অ্যাসবেস্টস শীট বা টাইলস হতে পারে।
গোয়ালঘরে বিভিন্ন শিটের ব্যবহার-
গরুর প্রধান সমস্যা গ্রীষ্মের প্রকটতা। তাই গেয়ালঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন শিট ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ
১. Corrugated iron sheet (ঢেউ খেলানো লোহার শিট)- বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রার তারতম্য থেকে গরুকে রক্ষা করতে corrugated iron sheet এর কোনো জুরি নাই। এর ঢেউ খেলানো বাহ্যিক কাঠামো মুলতঃ তাপমাত্রার তারতম্য রক্ষা করে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২. Aluminium iron sheet – অ্যালুমিনিয়ামে রং করা iron sheet সূর্যরশ্মিকে সরাসরি প্রতিফলিত করে। ফলে ভেতরের তাপমাত্রা খুব বাড়ে না। এছাড়াও ছাদের নিচে কাঠের ইনসুলেটর ব্যবহার করে এই কাজ করা যায়।
ঘ. গোয়ালঘরের আয়তন কেমন হওয়া উচিত?
একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরুকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবওয়ায় কমপক্ষে ৮০০ ঘনফুট বায়ুস্থান প্রয়োজন। ঠিকঠাক গোয়ালঘর নির্মাণে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার একটা নির্দিষ্ট অনুপাত দরকার। যেমনঃ যদি সাইডে ৮ ফুট উচ্চতা এবং পশ্চাৎপৃষ্ঠের ছাদ ১৫ ফুট উঁচু হয় তাহলে গোয়ালঘরে প্রয়োজনীয় বায়ু স্থান দিতে যথেষ্ট হবে।
বায়ুচলাচলকে আরও কার্যকর করার জন্য একটি অবিচ্ছিন্ন Ridge roof (পশ্চাৎপৃষ্ঠের ছাদ) এর অনেক প্রয়োজন।
চিত্রঃ পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সম্পন্ন গোয়ালঘর