গরুর সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ও প্রকারভেদ
খামারীরা যখন গবাদিপশুর জন্য খাবার সরবরাহ করেন তখন তার তালিকায় সব রকম পুষ্টি চাহিদা পূরণের একটি ছক থাকে এবং সে অনুযায়ী খাবার বণ্টন করা হয়। কিন্তু কেন? কারণ গরুর শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রদানের জন্য সুষম খাবার প্রয়োজন।
এখন প্রশ্ন হলো, সুষম খাবার কি?
সুষম খাদ্য বলতে ঐ সব খাদ্যকে বুঝায়, যে সব খাদ্যে প্রাণীর প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি ( শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও পানি) আনুপাতিক হারে ও গুণগত অবস্থায় প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে।
আসুন এখন জেনে নেই, সুষম খাদ্য কেন প্রয়োজন?
গাভীর জীবনধারণ ও উৎপাদনের জন্য পুষ্টির প্রয়োজন। সুষম খাদ্য না খাওয়ালে গাভী দুর্বল হবে, দুধ কম দিবে ও প্রজনন ক্ষমতা কমে যাবে। পশুর সময়মত গরম হওয়া, গর্ভধারন, বাচ্চা প্রসব তথা পশুর উর্বরতা রক্ষার জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন । তাছাড়া গর্ভবতী পশুর গর্ভস্থ বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধির জন্যও খাদ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুষম খাদ্য তৈরীতে কী কী বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে?
গাভীর সুষম খাদ্য তৈরী করার জন্য প্রথমে নির্ণয় করতে হবে গাভীর জন্য কি পরিমাণ শুস্ক পদার্থ, পরিপাকযোগ্য প্রোটিন এবং মোট পরিপাকযোগ্য পুষ্টি প্রয়োজন।
গাভীর সুষম খাদ্য তৈরীর জন্য বিবেচ্য বিষয়গুলো হলোঃ
১) গাভীর দেহের ওজনঃ গাভীর দৈনিক ওজনের উপর নির্ভর করে সুষম খাবার বণ্টন করতে হবে যাতে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। কম ওজনের গাভীর জন্য একটি তালিকা এবং বেশি ওজনের গাভীর জন্য আর একটি তালিকা নির্ধারণ করতে হবে।
২) গাভী গর্ভবতী কি নাঃ গর্ভবতী গাভীর জন্য কিছু বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। কারণ গাভীর পুষ্টি চাহিদার ঘাটতি থাকলে বাছুর অপুষ্টির শিকার হবে।
৩) গাভী দুধ দেয় কি নাঃ যদি দুধেল হয়ে থাকে তাহলে গাভীর খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার বণ্টন করতে হবে। অন্যথায় দুধের পরিমাণ কমে যাবে।
৪)দুধের পরিমাণ কতঃ কোন গাভী কেমন দুধ দেবে তা অনেকটাই নির্ভর করে গাভীর পুষ্টির চাহিদা কতোটুকু মিটছে তার উপর। দুগ্ধ দেয় এমন গাভীর খাদ্য তালিকায় বাড়তি পুষ্টির জোগান দিলে ভালো ফলন আসে।
৫) দুধে চর্বির পরিমাণ কতঃ দুধে যদি চর্বির পরিমাণ কম হয় তবে তার জন্য খাদ্য তালিকায় এমন কিছু দ্রব্যাদি রাখতে হবে যাতে চর্বি উৎপাদন বেড়ে যায়। কারণ দুধে চর্বির পরিমাণ কমে গেলে দুগ্ধজাতীয় খাবার উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।
গাভীর খাদ্যতালিকার প্রকারভেদঃ গাভীর খাদ্যকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়; যথাঃ
ক. আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য।
খ. দানা জাতীয় খাদ্য
গ. সহযোগী অন্যান্য খাদ্য ; যেমনঃ খনিজ উপাদান, ভিটামিন ইত্যাদি।
আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্যঃ আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য বলতে বোঝায় যেসব খাবারে রাফেজের পরিমাণ বেশি। এরা পরিপাক কার্যক্রম সক্রিয় রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোগায় এবং প্রোটিনের চাহিদা মেটায়। আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য মূলতঃ দু’ধরনের হয় ; যথাঃ
ক) শুষ্ক খাদ্যঃ শুষ্ক খাবার বলতে বোঝায় যাদের মধ্যে জলীয় অংশের পরিমাণ কম। যেমনঃ ধানের খড়, গমের খড়, খেসারী, মাসকালাই ইত্যাদির খড়। শুষ্ক খাদ্যে জলীয় অংশের পরিমাণ থাকে ১০-১৫%।
খ) রসালো খাদ্যঃ রসালো খাবারের মধ্যে বোঝায় যেসব খাবারে পানি এবং খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেশি। যেমনঃ কাঁচা ঘাস, গাছের পাতা, শাক-সবজি ইত্যাদি।
দানাদার খাদ্যঃ দানাদার খাদ্য সাধারণতঃ কম আঁশযুক্ত এবং শুষ্ক হয়। যার মধ্যে আমিষ, শর্করা এবং চর্বি জাতীয় উপাদানগুলো তুলনামূলক অনেক বেশী থাকে। গমের ভূষি, চাউলের কুঁড়া, তিলের খৈল, খেসারী ভাংগা ইত্যাদি দানাজাতীয় খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
গরুর সুষ্ঠ বিকাশের জন্য এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণে সুষম খাবার সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই। গাভী তখনই পর্যাপ্ত উৎপাদন করবে যখন তার পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। তাই গবাদিপশুর লালন-পালনে পুষ্টি চাহিদা মেটাতে খামারীদের অনেক যত্নবান হতে হবে এবং সুষম খাবার বণ্টন করতে হবে।