পুঁজি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থানুযায়ী প্রাথমিক অবস্থায় কতগুলো গরু নিয়ে ব্যবসা শুরু করবো
রজতআলীকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। মতলব চাচার চায়ের দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আনমনে কি যেন ভাবছে । সাহেদ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ” চাচা কোন সমস্যা নাকি? শরীর ভালো? ” তিনি প্রতিত্তোরে বলেন, “গতবছর ফসল সেভাবে ঘরে আসে নাই। আবার এবছরেও যে অবস্থা দেখতেসি তাতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে পথে বসতে হয় কি না। ” এসব সমস্যার কথা শুনে সাহেব তার জমানো টাকা দিয়ে বাড়তি কোনো রুজিরোজগার করতে বলেন। আলাপ – আলোচনার এক পর্যায়ে গবাদিপশু মোটাতাজা করণ ব্যবসার প্রসঙ্গ আসায় তিনি এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।
সাহেব ব্যবসার শুরুতেই তাকে কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন। আসুন জেনে নেই সাহেবের পরামর্শ, “পুঁজি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থানুযায়ী প্রাথমিক অবস্থায় কতোগুলো গরু নিয়ে ব্যবসা শুরু করবো “ সে সম্পর্কে –
গো-খামার শুরু করায় সবার আগে যেই জিনিস্টা মাথায় রাখা দরকার সেটা হচ্ছে কতগুলো গরু/ গাভী নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে সবার পুঁজি এবং লালন-পালনের পরিবেশ-পরিস্থিতি সমান না। তাই যার যার শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী গবাদিপশুর সংখ্যা নির্ণয় করতে হবে।
সাহেব তাকে যেসব বিষয় সমন্বয় করতে বলেন তা হচ্ছেঃ
১) বাসস্থানের জায়গাঃ গাভীর মোট সংখ্যার উপর নির্ভর করবে খামার কতোটুকু বড় হবে না হবে। তাই গুরুত্বের সাথে গাভীর সংখ্যা মাথায় রেখে খামার তৈরীর জায়গা বাছাই করতে হবে।
২) বাজেট পরিকল্পনাঃ গো-খামারের আয়ব্যয়ের হিসাব নির্ভর করবে গবাদিপশুর সংখ্যা এবং পশুগুলো কতোটা সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠছে তার উপর। তাই শুরুতেই বাজেট পরিকল্পনা করলে সঠিকভাবে লালন-পালন করাটা সহজ হয় । এর জন্য পশুর সংখ্যা জানাটা প্রয়োজন।
চিত্রঃ একটি গো-খামার ব্যবস্থাপনা।
৩) পশুর জাত নির্ধারণঃ কি ধরণের পশু লালন-পালন করা লাভজনক এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থানুযায়ী কতটা লালন-পালন সম্ভব সে সিধান্ত নেয়া অনেক জরুরী ।
৪) অল্প খরচে লাভবানঃ কোন জাতের গরুর প্রাধান্য বেশি থাকলে অল্প খরচেও লাভবান হওয়া যাবে তা নির্ণয় করা সহজ হবে। পশুর সংখ্যা জানা থাকলে যাচাই-বাছাই করা সহজ হয়।
৫) খাদ্যের জোগান দেয়াঃ আপনি যদি শুরুতেই মোট পশুর সংখ্যা মাথায় রাখেন তাহলে খাদ্য ব্যবস্থাপনা করতে সুবিধা হবে। অন্যথায় ঠিকভাবে খাবার সরবরাহ করতে না পারলে পুষ্টি চাহিদার ঘাটতি দেখা দিতে পারে; যা পশুর স্বাভাবিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৬) ঘাস চাষঃ অনেক সময় গবাদিপশুর জন্য পর্যাপ্ত ঘাস সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে পশুর সংখ্যা অনুযায়ী ঘাস চাষ করলে চাহিদা মেটানো সহজ হবে।
৭) বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাঃ পশুকে সুস্থ রাখতে গরুর গোয়ালঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। গবাদিপশুর পরিমাণ জানা থাকলে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা সহজ হয়।
এসব তথ্য জানার পর রজতআলী গো-খামার স্থাপনের উদ্যোগ নেন এবং শুরুতেই তিনি একটি পরিকল্পনা ছক করেন যে তার জমানো পুঁজি এবং লালন-পালনের সুবিধার্থে কতোগুলো পশু দিয়ে প্রাথমিক অবস্থায় খামার স্থাপন করলে লাভবান হতে পারবেন। কারণ একটি সঠিক পরিকল্পনাই পারে সফল ব্যবসায়ীর জন্ম দিতে।