ভালো জাতের গরু কোত্থেকে কিনবো?
আপনি যদি পান্তা ভাত খেতে চান, কোন উপকরণটা সবার আগে প্রয়োজন? অবশ্যই শুরুতে ভাত রান্নার কথাই সবার মনে আসবে। আবার পান্তাটা খেতে কতোটা মজা হবে তার অধিকাংশই নির্ভর করবে ভাতটা কতোটা ভালোভাবে সিদ্ধ হয়েছে তার উপর। ঠিক তেমনি খামারিরা যখন গো-খামার তৈরির কথা ভাববে তখন শুরুতেই তার মাথায় আসবে গরু কেনার কথা। আবার এই গরুর ব্যবসা কতোটা লাভজনক হবে তার অধিকাংশই নির্ভর করবে গরুর জাত কতোটা উন্নত তার উপর।
কিন্তু এই ভাল জাতের গরু কেনা খামারিদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ভালো জাতের গরু যেমন চাইলেই পাওয়া যায় না তেমনি সব খামারিও সহজে বুঝতে পারে না কোনটা ভালো হবে আর কোনটা মন্দ। এই যে গরু কেনার বিড়ম্বনা তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা ” ভালো জাতের গরু কোত্থেকে কিনবো? ”
আলোচনার শুরুতেই আসুন জেনে নেই গরু কিনতে গিয়ে খামারিদের কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় –
সমস্যা | বিশ্লেষণ |
১. ভাল জাতের গরু কেনাঃ | শুরুতেই যে ভুলটা হয় তা হলো ভাল জাতের গরু কেনা। অর্থাৎ কোন গরুর জাত কিনলে দুগ্ধ উৎপাদন বা মোটাতাজা করণ ব্যবসা লাভজনক হবে তা সঠিকভাবে নির্বাচন করতে অনেক খামারিই পারেন না। |
২. সঠিক বয়সের গরু কেনাঃ | যে কোনো পশুরই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শারীরিক অনেক পরিবর্তন আসে এবং একটা পর্যায়ে তাদের শারীরিক বিকাশ ও বন্ধ হয়ে যায়। তখন হাজার দেখভাল করলেও ব্যবসায়ীদের জন্য লাভজনক ফলাফল তেমন আসে না। তাই আপনার ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী (দুগ্ধ উৎপাদন নাকি মোটাতাজা করণ) নির্ধারণ করতে হবে যে অল্প বয়সী গরু কিনবেন নাকি মাঝারি। কিন্তু ব্যবসার জন্য বয়স্ক গরু না কেনাই উত্তম। |
৩. সুস্থ এবং অসুস্থ গাভীর মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাঃ | অনেক খামারিই না বুঝে অসুস্থ এবং রোগাক্রান্ত গরু কিনে ফেলে। এতে করে খামারের একটা গরুর পাশাপাশি অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। আবার অসুস্থ গরুর চিকিৎসা করাতে এবং তা থেকে ভাল ফলাফল না পাওয়ার জন্য অলাভজনক ব্যবসার সম্মুখীন হতে হয়। |
৪. বংশগত কিংবা সৃষ্টিগত ত্রুটিপূর্ণ কোন প্রাণী কেনাঃ | বংশগত কিংবা সৃষ্টিগত ত্রুটিপূর্ণ কোন প্রাণী কেনা যাবে না। এতে করে পরবর্তী প্রজন্মও অসুস্থ হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। এমন ঝামেলা এড়াতে বংশতালিকা ভালোভাবে দেখে নিতে হবে । |
৫. সাময়িক দুধ দেখে গরু কেনাঃ | গরু কখনো বেশি দুধ আবার কখনো কম দুধ দিতে পারে। তাই গরু যখন সবচেয়ে বেশি দুধ দেয় সেই সময়ের কর্মক্ষমতাকে বিবেচনা না করাই উচিত। কারণ বাচ্চা প্রসবের পরে গরুর দুধ উৎপাদন সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই সদ্য বাচ্চা প্রসব করেছে এমন কোনো গরু না কেনাই উত্তম। |
এতো গেলো সমস্যার কথা। এবার সমাধানের পালা। আসুন জেনে নেই আমরা কোত্থেকে ভালো গরু কিনতে পারবো সে ব্যাপারে কিছু তথ্যঃ
১) সরকারী ডেইরী ফার্মে ভালো জাতের গরু পাওয়া যায়। সেখানে সরকারীভাবে প্রজনন কার্যক্রমের আওতায় ভালো, সুরক্ষিত জাতের গাভী ও ষাঁড়ের বীজ সরবরাহ করা হয়।
২) সাধারণত বাণিজ্যিক গো-প্রজনন খামারগুলো খামারের জন্য গরু বিক্রি করে। প্রতিষ্ঠিত খামারগুলোতে বংশগত সব তথ্য থাকে। তাই গাভীর উৎপাদন সক্ষমতা সম্বন্ধে ধারণ করা যায়। এছাড়াও বংশগত রোগ-বালাই সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়।
৩) এছাড়া পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ এইসব এলাকার নিজস্ব কিছু জাত আছে যারা ভালো উৎপাদনের জন্য আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হচ্ছে। এইসব এলাকাতেও ভালো মানের গরু পাওয়া যেতে পারে।
আশা করছি উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা খামারিরা ভাল জাতের গরু কেনার সমস্যাগুলো উপলব্ধি করতে পারবেন এবং সমস্যা সমাধানের উপায়ান্তর খুঁজে পাবেন।