দেশে দেশে কোরবানির ঈদ

Published by Eyamim Sultana on

ঈদুল আযহার ইতিহাস

কোরবানি শব্দটি হিব্রু “কোরবান” (קרבן‬) আর সিরিয়াক ভাষার “কুরবানা“ শব্দদুটির সাথে সম্পর্কিত যার আরবী অর্থ “কারো নিকটবর্তী হওয়া”। ইসলামি মতে কোরবানি হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা।

ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে স্বপ্নযোগে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কোরবানি করার নির্দেশ দেন। তখন তিনি তার প্রিয় পুত্রকে নিয়ে কোরবানির উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দানে যাত্রা করেন। যখন ইব্রাহীম (আঃ) আরাফাত পর্বতের উপর তাঁর পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলায় ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এই দিবসটি উদযাপন করেন।

হরেক দেশে, হরেক নিয়ম!

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপনে রয়েছে আলাদা চিত্রও। শুধু উদযাপনেই নয়, এদের নাম নিয়েও দেখা যায় বিভিন্নতা। তবে সকল ক্ষেত্রেই সবার লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য অর্জন করা। চ্লুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরবানি ঈদ পালনের বৈচিত্রতা।

ইন্দোনেশিয়া

আয়তনের দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। এখানে সামাজিকভাবে পশু কোরবানি হয়। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা হাট থেকে পশু কিনে মসজিদে দিয়ে আসেন। মসজিদের ইমামের কাছে এলাকায় যত ঘর আছে, তার হিসেব থাকে। তিনি কোরবানির পশুর গোশত ভাগ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তাদের মধ্যে যারা সামর্থ্যবান তারা নিজ ইচ্ছাতেই গোশত ফিড়িয়ে দিয়ে গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে বলেন।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় মোট জনগণের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ মুসলিম ৷ তাই ঈদুল আযহায় মালয়েশিয়াতে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। সকালে ঈদ জামাত ও পশু কোরবানির পর নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে ঈদ পালন করতে দেখা যায় তাদের। পশু কোরবানির পর এদিন রাস্তাঘাটে মশাল জ্বালানো কিংবা আতশবাজি পোড়ানো হয়৷ এই দিনে মালয়েশিয়ার মুসলিম পরিবারগুলোর দরজা সবার জন্য সব সময় খোলা থাকে। আত্নীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের সাথেই এভাবেই ভাগ করে নেন ঈদের আনন্দ ৷

সৌদি আরব

একদিকে পবিত্র হজ এবং অন্যদিকে কোরবানি, এই দুইটি মিলিয়ে সৌদিতে ঈদুল আযহার উৎসব বেশ সুন্দর রুপ লাভ করে। এদিন দেশটিতে থাকে সরকারী ছুটি। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সৌদির জনগণ এবং বহিরাগত হাজিরা ঈদুল আযহা পালন করেন ৷ ঈদের নামাজের পর খুব সকালে পরিবারের সবাই মিলে পশু কোরবানি দেখে । তারপর সেখান থেকে কিছু গোশত এনে বাসায় রান্নাবান্না করে । নাশতা শেষে সবাই আত্নীয় স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যায়। নিজস্ব পদ্ধতিতে তারা কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে থাকেন ৷ কোরবানির পশুর গোশতকে তারা খাবারের বরকত হিসেবে বিবেচনা করেন।

মিসর

মিসরে ঈদুল আযহার উৎসব শুরু হয় জিলকদের শেষের দিনগুলো থেকে। ঘরবাড়ি সাজানো হয়, গ্রাম ও মরু অঞ্চল থেকে কোরবানির জন্য পশু শহরে নিয়ে আসা হয়। ঈদের নামাজের পর নারীরা একটি ঘরে সবাই একত্রিত হয়। সেখানে সবাই মিলে বাচ্চাদের উপহার, সালামী ও বিভিন্ন মুখরোচক খাবার দিয়ে থাকেন। মাগরিবের নামাজের পর আবার সবাই সমবেত হয় এবং দস্তরখানা বিছিয়ে রাতের খাবারে অংশগ্রহণ করেন।

যুক্তরাজ্য

নিউইয়র্কে বেশ জাকজমকভাবে কোরবানির ঈদ পালন করা হয়। এখানে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি বাংলাদেশীর বসবাস। যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জামাইকা মুসলিম সেন্টারে। প্রায় ১৫ হাজারের বেশি মুসল্লি জামাতে অংশ নেন। ঈদের জামাতের পর শুরু হয় কোরবানি। নির্দিষ্ট গ্রোসারিতে অথবা পশুর খামারেই সাধারণত কোরবানি করে সেখানকার মুসলিমরা । গ্রোসারিতে কোরবানি করলে কোরবানি দাতার নাম, বাবার নাম এবং অর্থ দিয়ে আসলে তারাই কোরবানি করে গোশত প্যাকেট করে রাখেন।

আরব আমিরাত

আরব আমিরাতে কোরবানির পশু কেনার আধুনিক ব্যবস্থ্যা আছে। অনেকে ঘরে বসেই ভিডিও কলের মাধ্যমে পশু ক্রয় করে থাকেন। ঈদের ১ম, ২য়, ৩য় দিনে খুব ঘটা করে এখানে কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানির জন্য প্রায় প্রতিটি পরিবার একাধিক পশু কেনেন। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে সবাই নিজ নিজ পশু কোরবনির মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেন। ধনীরা দান করার জন্য এদিন খোলা মনে বের হোন।

জার্মানি

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ঈদে ছুটি মেলেনা। জার্মানিও সেই দলের অন্তর্ভুক্ত । এ দেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৯ শতাংশ মানুষ মুসলিম। এ কারণেই জার্মান মুসলিমরা দুই ঈদের কোনো ঈদেই ছুটি পান না। জার্মানির অধিকাংশ মুসলমান বার্লিনে থাকেন। ওখানেই তারা ঈদের নামাজ আদায় করেন।

অষ্ট্রেলিয়া

ঈদুল আযহার দিন অষ্ট্রেলিয়ায় সরকারি ছুটি থাকে না। তবে ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ দিনটিতে বন্ধ থাকে। ঈদের দিন মুসলিমরা মসজিদে নামাজ আদায় করেন। তারপর কোরবানি দিয়ে গোশত এবং চামড়ার টাকা গরীবদের মাঝে দান করেন। অষ্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা এ দিনে বাকলাঙ্গা এবং লোকুম নামক দুটি তুর্কিশ ডিম রান্না করেন।

Categories: Fattening