গাভীর প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর পরিচর্যা

Published by Khamar-e Agro Research Team on

“গর্ভধারণ” অনেক আবেগঘন একটা মুহূর্ত ; হোক সেটা মানব জাতি কিংবা কোনো নীরিহ প্রাণী। এই জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পৃথিবীতে স্বপ্রজাতির বিস্তার ঘটে। তাই প্রত্যেকটা প্রাণীরই এই সময়কালে অনেক যত্ন এবং পরিচর্যার দরকার পরে। গাভীরও প্রসবকালীন সময়ে কিছু বিশেষ যত্নের দরকার । এসম্পর্কে আমাদের আজকের আলোচনা – ” গাভীর প্রসবকালীন এবং প্রসবত্তোর পরিচর্যা ” 

 

গাভীর প্রসবকালীন পরিচর্যা

প্রসবকালীন সময় কিছু লক্ষণ দেখার পরপরই সঠিকভাবে পশুর পরিচর্যা করতে হবে। যে বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে তা হলোঃ

১। প্রসবের সময় গাভীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক বিছানায় লোক চোখের আড়ালে নিরিবিলি স্থানে রাখতে হবে। পাশাপাশি কুকুর, বিড়াল, শিয়াল যেন পরিবেশ বিরক্ত না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

২। প্রসবের পূর্ব থেকেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো সময় ব্যথা উঠতে পারে এবং সঠিক সময়ে গাভীর প্রসব না করানো হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি বাছুরের মৃত্যু ঝুঁকিও থাকতে পারে।

৩। প্রসবের সময় প্রসূত বাচ্চা সাধারনত সামনের দু’পায়ের মধ্যে মাথা দিয়ে বেরিয়ে আসবে। এর ব্যতিক্রম হলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করতে হবে।

৪। প্রসবকালীন সময়ে গাভী বারবার উঠা-বসা করবে। এ সময় সাবধানের সাথে ধীরে ধীরে বাছুরকে বের করতে হবে।

৫। প্রসবের ২/১ দিন আগে থেকে রাতে পাহারা দিতে হবে যেন গাভী প্রসব করলে গর্ভফুল খেয়ে না ফেলতে পারে। কারণ এতে গাভীর মারাত্মক ক্ষতি হয়।

প্রসবের পরে গাভী এবং বাছুর

প্রসবের পরে গাভী এবং বাছুর

প্রসবোত্তর গাভীর যত্ন ও পরিচর্যাঃ বাচ্চা প্রসবের পর পরই গাভীর  কিছু বিশেষ যত্নের দরকার পরে। কারণ অনেকসময় অধিক রক্তক্ষরণের জন্য গাভীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এসব ঝুঁকি এড়াতেই এখন আমরা আলোচনা করবো “প্রসবোত্তর গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা” নিয়েঃ

১। বাচ্চা প্রসবের পর পরই নিমপাতা বা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট এর কিছু দানা সহযোগে পানি গরম করে গাভীর জননতন্ত্রের বাইরের অংশ, ফ্লাংক এবং লেজ পরিষ্কার করতে হবে। এতে করে গাভী আরাম বোধ করবে এবং জীবাণু মুক্ত থাকবে। 

২। গাভীর যাতে কোনোভাবেই ঠান্ডা না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে ; ঠান্ডা লাগলে উষ্ণতার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে পরিষ্কার চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 

৩। প্রসবের পরপরই একটি বালতিতে কুসুম গরম পানির সাথে দেড় কেজি গমের ভুষি, আধাকেজি চিটাগুড়, ৫০ গ্রাম লবন মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিতে হবে। এরূপ খাদ্য  গাভীর গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে সহায়তা করে। তাছাড়া কুসুম গরম পানিতে শুধৃু ঝােলাগুড় মিশিয়েও গাভীকে খাওয়ানো যেতে পারে। এতেও গাভীর গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যায়। 

৪। গাভী যাতে নবজাতজক বাছুরকে চাটতে পারে এজন্য বাছুরকে গাভীর কাছে যেতে দিতে হবে। গাভী উঠে দাঁড়াতে না পারলে তাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে হবে। 

৫। প্রসবের পরপরই গাভীকে আংশিকভাবে দোহন করতে হবে এবং বাছুরকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব শাল দুধ খাওয়াতে হবে। 

৬। সাধারণতঃ প্রসবের ২-৪ ঘন্টার মধ্যেই গর্ভফুল বের হয়ে যায়। ১২ ঘন্টার পরেও গর্ভফুল বের না হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

৭। গর্ভফুল বের হওয়ার সাথে সাথে তা মাটিতে পূঁতে ফেলতে হবে। গাভী যেন গর্ভফুল না খেয়ে ফেলে

সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৮। গাভীর শাল দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। শাল দুধের সাথে অধিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যাওয়ার ফলে গাভীর ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রােগ মিল্ক ফিভার হতে পারে। এজন্য গাভীকে প্রচুর কাঁচা সবুজ ঘাস এবং খনিজ লবণ সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।

৯। গাভীকে প্রথমতঃ হালকা গরম পানিতে গমের ভূষি ভিজিয়ে খেতে দিতে হবে। একই সাথে অল্প

পরিমাণ কাঁচা ঘাসও খাওয়ানো যেতে পারে। বাচ্চা প্রসবের ২ দিন পর থেকে গাভীকে দানাদার খাদ্য খাওয়ানো শুরু করতে হবে।

১০। গাভী দোহনের আগে ও পরে ওলান, তলপেট, আশ-পাশ ঈষৎ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মুছে দিতে হবে।

১১। বাছুরকে দুধ খাওয়ানোর আগে ওলান একইভাবে ধুয়ে মুছে নিতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রথমে খানিকটা দুধ ফেলে দিয়ে পরে বাছুরকে খেতে দিতে হবে। কারণ বাঁটের প্রথম দুধে ময়লা ও জীবাণু থাকতে পারে।

১২। বাছুরকে দুধ চুষে খেতে দেওয়া উচিত, এর ফলে গাভী দেরীতে দুগ্ধহীনা হয়। বাছুর বাঁট চুষলে এক ধরনের উদ্দীপনা (Stimulation)  হওয়ায় দুগ্ধদানের হরমোন নিঃসৃত হয়।

১২। গাভীর ঘর সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও শোবার জায়গায় পরিষ্কার শুকনা খড়ের নরম বিছানা

করে দিতে হবে।