বাংলাদেশে পোলট্রি খাত – সমস্যা ও সম্ভাবনা
রমিজ উদ্দীন চতুর্থ শ্রেণির একজন সরকারি চাকুরীজীবি। অবসরপ্রাপ্তির পর যে কটা পয়সাকড়ি পেয়েছিল তা দিয়ে শহরেই কিছু জায়গা জমি এবং মাথাগোঁজার মতো একটা বাসা তৈরি করে। এরপর পরে যায় মহা দুশ্চিন্তায়। ছেলেমেয়েরা এখনো বড় হয়নি। পেনশনের এই অল্প কটা টাকা দিয়ে সংসার চালানোও অনেক কষ্টসাধ্য। তাই অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পোলট্রি খামার করার চিন্তাভাবনা করে। এতে করে তার অবসর সময় কাটার পাশাপাশি একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে সংসার চালানোও অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।
শহর অঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেও আজকাল পোলট্রি শিল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই শহর কিংবা গ্রামে বাড়তি কর্মসংস্থান কিংবা বেকারত্ব ঘোচাতে রমিজ উদ্দীনের মতো যে কেউ যদি পোলট্রি খাতকে উপায়ান্তর মনে করেন, তাদের জন্যই আমাদের আজকের আলোচনা বাংলাদেশের পোলট্রি খাত – সমস্যা ও সম্ভাবনা।
শুরুতে পোলট্রি খাতে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি:
- হঠাৎ করে কর আরোপ করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে।
- কয়েক বছর আগে বার্ড ফ্লুর আক্রমণে এ শিল্পের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করে। অনেক মুরগি মারা গেছে। অনেক খামারিকে পথে বসতে হয়েছে।
- পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিতে খাদ্যের মান বজায় না রাখার কারণে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য পোলট্রি খাদ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষাক্ত পদার্থ কিডনি, লিভার নষ্ট করে দেয়। লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
- বাজারে রাবারের কৃত্রিম ডিমের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যা বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি করে থাকে।
- অনেক সময় দেখা যায় ভ্যাকসিনের কথা বলে অননুমোদিত ওষুধ আমদানি করা হয়। এছাড়া পোলট্রিশিল্পের কথা বলে এনে অন্য খাতে ব্যবহার বা বাইরে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
- মুরগি ড্রেসিং করানোর সময় একই পানি দুই-তিন দিন ব্যবহার করছে। ওই মাংস খাওয়ার পর ডায়রিয়াসহ নানা রোগ হচ্ছে।
- মুরগি অসুস্থ হলে চিকিৎসা করানো হয় না। ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
এতো গেলো পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যার কথা। এখন আসুন এ শিল্পের সম্ভাবনার কথা আলোচনা করা যাক:
উদ্যোগ/ সুবিধা | কার্যকারিতা / বিশ্লেষণ |
প্রবৃদ্ধি | পোলট্রি শিল্পে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। |
বিনিয়োগ | পোলট্রি শিল্পে বিনিয়োগ ২৫ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। ২০২০-২১ সালে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। |
কর সুবিধা | ব্যবসায়ীদের জন্য এই খাত থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্জিত মুনাফার ওপর কোনো কর নেই। |
কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য বিমোচন | বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা রাখছে পোলট্রি শিল্প। গ্রামের কৃষক ঘরের পাশে হাঁস-মুরগি পালছেন। ডিম বিক্রি করছেন। খুব ছোট্ট জায়গায় পোলট্রি খামার করা যায় যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক। |
নারী সক্ষমতা | গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারে পোলট্রিশিল্প। |
পুষ্টিগুণ | একটি ডিমের খাদ্য গুণাগুণ যে কোনো খাদ্যের চেয়ে বেশি। ডিমের ৯৪ ভাগই মানব শরীরে কাজে লাগে। একটি ডিমের ওজন ৬০ গ্রাম হলে ৫৪ গ্রামই কাজে লাগে। ডিমই একমাত্র খাদ্য যার মধ্যে সব ধরনের ভিটামিন আছে। |
আমিষের চাহিদা পূরণ | ডিম এবং পোলট্রির মাংস আমিষের চাহিদা পূরণ করছে। এত কম মূল্যে আর কোনো খাদ্য থেকে যা পাওয়া যায় না। |
রুটি-রুজি | লাখো মানুষের রুটি-রুজি হচ্ছে পোলট্রি থেকে। গ্রামের মানুষেরাও সপ্তাহে কয়েকদিন মাংস খেতে পারে। |
অর্থনৈতিক উন্নয়ন | ২০০৫ সালে দেশে ৫৪২ কোটি ডিম উৎপাদন হয়েছে। ২০১৫ সালে দেশে ডিম উৎপাদন হয়েছে ১,০৮৯ কোটি। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক উন্নতি সাধন করেছে। |
পোলট্রি খাতের আরও উন্নয়নে গবেষণা ফান্ড তৈরি করতে হবে। গবেষকদের পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনে সহায়তা করা উচিত। যাতে করে এ শিল্পের বিস্তার লাভ করা যায়। রমিজ উদ্দিন কিংবা গ্রামের বধুরাও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে এ শিল্পের দ্বারা।