বাংলাদেশের জন্য জনপ্রিয় জাতসমুহঃ রেড চিটাগাং ক্যাটেল

Published by Uttam Deb on

গরুর পরিচিতি ও প্রাপ্তিস্থান

রেড চিটাগাং ক্যাটেল বা অষ্টমুখী লাল গরু বা লাল বিরিষ সংক্ষেপে আরসিসি আমাদের দেশের অধিক পরিচিত একটি গরুর প্রজাতি। এটি আমাদের দেশে একটি স্বীকৃত গুরুর প্রজাতি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এখনও কোন আন্তর্জাতিক জার্নালে বা গবেষণাপত্রে আমাদের দেশে জনপ্রিয় এই গরুর প্রজাতি নিয়ে এখনও কোন লেখালেখি হয়নি। রেড চিটাগাং ক্যাটেলের প্রধান চারণস্থল চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম। এছাড়াও এটি কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে পাওয়া যায়।

বৈশিষ্ট্য

আরসিসি গরু দেখতে লাল বর্ণের। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ সে.মি. এবং উচ্চতা প্রায় ২৪ সে.মি. হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড়ের ওজন প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ কেজি হয়ে থাকে। অপরদিকে গাভীর ওজন হয়ে থাকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কেজি। গরুর অজনের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ খাদ্য উপযোগী মাংস।
এছাড়াও এদের গলা খাটো, ওলান বেশ বর্ধিত ও বাট সুডৌল হয়। এদের শিং ছোটো ও চ্যাপ্টা। সাধারণত এদের চামড়া পাতলা হয়ে থাকে।
আরসিসি গরু প্রজননক্ষম হয়ে উঠতে সময় লাগে প্রায় দেড় বছর। তারপর থেকে বছরে গড়ে একটি করে বাচ্চা প্রসব করে। গরুর গর্ভধারণের হার বেশি। আরসিসি গরু ৪ থেকে ৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে প্রতিদিন। দুধের মধ্যে ফ্যাটের পরিমান বেশি; প্রায় ৫-৬%। এদের দুগ্ধদান কাল প্রায় ২৬০ দিন।

কেন জনপ্রিয়?

আরসিসি গরু দেখতে সুন্দর, কোরবানির হাটে সহজেই চোখে পরার মতো এই গরুর প্রজাতি। তবে, গরুর এই বিশেষ প্রজাতি জনপ্রিয় হওয়ার এক বিশেষ কারণ হল, এর মাংস খুবই সুস্বাদু। মাংসের মধ্যে চর্বির পরিমাণ কম হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামুলক ভাবে ভালো। তাই প্রতিকুল পরিবেশে খুব সহজেই এরা মানিয়ে নিতে পারে। সাধারণত, আরসিসি গরু পালন করা হয় দুধ ও মাংস, দুইটা উৎপাদন করার জন্যই। তবে অনেকে শুধু মাত্র দুধ বা মাংস, যে কোন একটা উৎপাদনের উদ্দেশ্যে গরুর এই বিশেষ প্রজাতি পালন করে থাকে।
এসব গুনাগুণের কারণে এদের চাহিদা ব্যাপক। চট্টগ্রামের কৃষকেরাও আরসিসি গরু পালনের আগ্রহী।

বর্তমান অবস্থা

অধিক হারে সংকরায়নের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গুরুর এই বিশেষ প্রজাতি। এক সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লাতে প্রছুর খামার ছিল আরসিসি গরু পালনের উদ্দেশ্যে, কিন্তু অধিক লাভ না হওয়ায় কৃষক আরসিসি গরু পালনে এখন আর উৎসাহিত নয়। সবাই ঝুঁকছে সংকরায়িত ও বিদেশী গুরুর পালনের দিকে।

এই বিষয়টি আরও ভালো করে বুঝা যাবে বর্তমানে গরুর সংখ্যা বিবেচনা করলে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিশুদ্ধ আরসিসি গরু রয়েছে বর্তমানে মাত্র কয়েক হাজার। অথচ সংকরায়িত আরসিসি গরু রয়েছে প্রায় ২০ হাজার।

বর্তমানে বেড়েছে গুরু সব ধরনের খাদ্য, যেমন খৈল, ভুষি, উন্নত জাতের কাচা ঘাস, এমকি, ওষুধপত্র ও ভ্যাকসিনের দাম! আরসিসি গরু উন্নয়ন প্রকল্পও বর্তমানে খুবই সীমিত। নেই তেমন কোন উন্নত গবেষণার ব্যবস্থা, ফলে কার্যকর ভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না আরসিসি গরু। বর্তমানে বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা আরসিসি গরু সংগ্রহ করে সেগুলোর বংশবিস্তারের জন্য কাজ করছে, যেন এগুলো হারিয়ে না যায় বিশ্বায়নের ফলে।

Categories: Fattening