বাংলাদেশের জন্য জনপ্রিয় জাতসমূহ : হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান গরু
হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান জাতের প্রথম পূর্বপুরুষের দেখা মেলে আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে। হলস্টেইন গরু উত্তর জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চল থেকে আসে এবং ফ্রিজিয়ানরা মূলত নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছিল। দুটি প্রজাতি ক্রস এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় যুগান্তকারী এক নতুন কালো সাদা ব্রিড। দুধ উৎপাদন ক্ষমতার জন্য জাতটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।
এক নজরেঃ
- সাদা-কালো রঙ
- ওজন গাভী ৬০০-৮০০ কেজি, ষাঁড় ৭০০-১১০০কেজি
- উচ্চতা ৫৫- ৭০ ইঞ্চি
- উচ্চ গর্ভধারণ হার
ফ্রিজিয়ান গরুর শিং থাকে এবং মূলত কালো-সাদা বা লাল-সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। তবে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান মূলত তার গায়ের রং এবং দুধ উৎপাদন ক্ষমতার কারণে পরিচিত। তাদের সাদা কালো রং এর কারণে সহজেই চোখে পড়ে। এদের গায়ের রঙ লাল সাদাও হতে পারে কিন্তু আজকাল লাল জাতটি কেবল নেদারল্যান্ডসে, খুব কম সংখ্যক ক্ষেত্রেই দেখা যায়। একটা হলস্টেইন জাতের পূর্ণ বয়স্ক গাভীর ওজন ৬০০-৮০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৭০০-১১০০ কেজি পর্যন্ত হয়। উচ্চতা হতে পারে ৫৫- ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত। একটা হলস্টেইন গাভীর বাছুর এর ওজন ৪০ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়।
একটি স্বাস্থ্যকর হলস্টাইন বাছুরের জন্মের পর প্রায় ১৫ মাস বয়সে, যখন এর ওজন ৩৫০ কেজি ছাড়ায়, তখন এটি বংশবৃদ্ধির উপযোগী হয়। তবে ২৪ থেকে ২৭ মাস বয়সের মধ্যে প্রথমবার গর্ভধারণ করা হলস্টেইন গরুর জন্য সবচেয়ে কাম্য। গর্ভধারণ প্রায় নয় মাস স্থায়ী হয়। সাধারণত একটি গরু প্রায় ৬ বছর উর্বর থাকে, কখনো কখনো বেশিও হতে পারে।
এরা দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী জাত হিসেবে পরিচিত। ল্যাক্টেশন এর জন্য এদের সুনাম আছে, গড়ে ৩.২ টা ল্যাক্টেশন প্রত্যেক গরুর জীবনে আসে। অনেকের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ টি ল্যাক্টেশনের কথাও শোনা যায়। এক ল্যাক্টেশন পিরিয়ড এ হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান গরু গড়ে ৯,০০০ থেকে ১২,০০০ কেজি দুধ দেয় এবং দুধ উৎপাদনকাল ৩০০-৩১০ দিন। মিল্ক ফ্যাট ৩.৮-৪.৮% এবং মিল্ক প্রোটিন ২.৮-৩.৭% এবং ল্যাক্টোজ ৩.৭-৫.৩% (ডাচ হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, জাত ভেদে পরিবর্তন হতে পারে)। এই জাতের গরু সাধারণত অ্যাভারেজ ৭-৮ বছর নিয়মিত দুধ দেয় যদিও দুধ উৎপাদনের ৪ থেকে ৫ বছর পর থেকে দুধ উৎপাদন কমতে থাকে । উৎপাদনের তৃতীয় এবং চতুর্থ বছর সর্বোচ্চ দুধ দেয়।
মাংস উৎপাদন এই জাতের গরু পালনের মূল উদ্দেশ্য না হলেও মাংসের বাজারে রয়েছে ফ্রিজিয়ান এর বহুল উপস্থিতি কারণ পৃথিবীর মোট গরু পালনের ৫০% এর উপরে শুধু এই জাত পালন করা হয়। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় সাইজে বেশ বড় হওয়ায় মাংস উৎপাদন ও সন্তোষজনক, যে কারণে এটা ডুয়াল পারপাস (মাংস ও গরু) গরু না হয়েও এটা অলিখিত ডুয়াল পারপাস গরু।
এদের রয়েছে যেকোন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা। উচ্চভূমি, নিম্নভূমি কিংবা বাণিজ্যিক খামার – সব পরিবেশেই এরা মানানসই। এই জাতের গরুর জীবনকাল ছোট, গড় জীবনকাল ১২-১৪ বছর। এই জাতের গরু পালন অভিজ্ঞ এবং ট্রেনিংপ্রাপ্ত খামারি ছাড়া খুব কঠিন। খাবার এবং রক্ষনাবেক্ষন খরচ বেশি, স্বাস্থ্যের বেলায় বেশ অনুভূতিশীল এবং চিকিৎসা ব্যয়বহুল।
৮৭.৫% এর কম হলস্টেইন ব্লাড এবং ১২.৫% এর বেশি ফ্রিজিয়ান ব্লাড থাকলে একে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাত বলা যাবে। ৮৭.৫% এর বেশি ফ্রিজিয়ান ব্লাড থাকলে একে ফ্রিজিয়ান এবং ৮৭.৫% এর বেশি হলস্টেইন ব্লাড থাকলে একে হলস্টেইন বলা হয়।
পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে পরিচিত এবং জনপ্রিয় জাতগুলোর একটি হিসেবে, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান হতে পারি ডেইরি খামারির প্রথম পছন্দ। দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং রোগ-শোক থেকে দূরে রাখতে পারলে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান খুব সহজেই বিনিয়োগ উঠিয়ে আনতে সক্ষম।
ধন্যবাদ সবাইকে।
এই লেখাটি বিভিন্ন দেশি বিদেশী লেখা থেকে অণুপ্রাণিত, সংকলিত, সংগৃহীত এবং পরিমার্জিত।
সংকলনে,
দীপ্ত সাহা,
বিজনেস লিড, খামার-ই লিমিটেড।