সফল ব্যবসায়ীদের বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা

Published by Khamar-e Agro Research Team on

ধরুন, আপনি ঘরোয়া বুটিকের ব্যবসা শুরু করবেন। সে অনুযায়ী মালামাল কিনেও এনেছেন। কিন্তু কেউ জানে না আপনার ব্যবসার কথা। আবার আপনিও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা না করেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এতে কি কখনও সফলতা আসবে? একজন সফল ব্যবসায়ী হতে গেলে প্রয়োজন সঠিক বাজারজাত পরিকল্পনা। আর সেই পরিকল্পনা কে ফলপ্রসূ করতে আপনাদের কী কী বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে সে সম্পর্কেই আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আসুন জেনে নেই –

কী কী বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে? 

  • ব্যবসায় সফল হতে গেলে খামারীদের পণ্য বাজারজাতকরণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে। কারণ খামারীদের সফলতা নির্ভর করে উৎপাদিত পণ্য লাভজনক দামে বিক্রির উপর। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি খামারীদের যেসব দিকে কড়া নজর রাখতে হবে তা হলোঃ 

১. বাজারজাতকরণ সম্পর্কে জ্ঞান, সচেতনতা, তথ্য প্রবাহ এবং বাজারজাতকরণে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

২. বাজারজাতকরণ সম্পর্কিত মৌলিক বিষয় সমূহ যেমনঃ কি পণ্য কিনবো, কোথা থেকে কিনবো, কত দামে কেনা উচিত , কোথায় এবং কীভাবে বিক্রি করবে এবং লাভজনক দামে বিক্রি করা সম্ভব কি না তা জানা দরকার। 

৩. বাজারজাতকরণ খরচ কমানো এবং লাভজনক দামে বিক্রির বিষয়ে কৌশল অবলম্বন করা উচিত যাতে খামারীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়।

বাজারজাতকরণে কী কী খরচ হতে পারে? 

বাজারজাতকরণের খরচগুলো খামারীদের নিকট দৃশ্যমান নয়। তাই প্রতিটা খামারীর বাজারজাতকরণের খরচ সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকা উচিত। বাড়তি খরচ কীভাবে কমানো যায় তা গুরুেত্বর সহিত বিবেচনা করা উচিত। 

বাজারজাতকরণে বিভিন্ন ধরনের খরচ হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ খরচগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

১. কৃষিজ পণ্য প্রস্তুত এবং 

২. প্যাকেজিং

৩. পরিবহন খরচ 

৪. বাজার টোল/এজেন্টের কমিশন

১. কৃষিজ পণ্য প্রস্তুতিঃ এখানে কৃষিজ পণ্য বলতে খামারীদের খামার সংগঠন, পশু লালন-পালন, তাদের খাবার সরবরাহ, ওষুধ পথ্য এসব কিছু বোঝানো হয়েছে। পণ্য বাজারজাতের আগে প্রস্তুত করণে খামারীদের অনেকটা খরচ হয়ে থাকে। এরপর তা বিক্রির মাধ্যমে খামারীদের আয় উন্নতি হয়ে থাকে। 

২. প্যাকেজিং খরচঃ কৃষিজ পণ্য খামার থেকে প্যাকেজিং পয়েন্টে নিয়ে আসতে সময় ও শ্রমের মজুরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আমাদের যা যা করতে হবেঃ

  • প্যাকেজিং খরচ যেমন প্লাষ্টিক ক্রেটস্ এর দাম, পণ্যের পরিমাণ এবং ক্রেটস্ ব্যবহার দিনসমূহ বিবেচনা করে প্যাকেজিং খরচ নির্ণয় করা যাবে।
  • বাজারজাতকরণ চেইন এর প্রত্যেকটি পর্যায়, যেমন পণ্যদ্রব্য উঠানো, নামানো, প্যাকেজিং, প্যাকিং খোলা, এসব প্রত্যেকটি কাজের খরচ আছে। একটি কাজে খরচ কম কিন্তু সবগুলো কাজের মোট খরচ অনেক।

৩. পরিবহন খরচঃ

– কৃষিজ পণ্য প্যাকেজিং করার পর পরিবহন করা হয়। গ্রামে পরিবহন মাধ্যম হলো ভ্যান, বাস, নৌকা, মটর সাইকেল, ট্রাক ইত্যাদি।

– খামার হতে বাজারে পণ্য পরিবহনের হিসাব করতে হয়।

– কৃষিজ পণ্য বেশী হলে পরিবহনের জন্য ট্রাক/পিক আপ ভাড়া করতে হয়। 

৪.  বাজার টোল/এজেন্টের কমিশনঃ

-বাজারে ইজারাদার আছে, বাজারে এসে কৃষিজ পণ্য বিক্রি করলে টোল দিতে হয়   যা অনেকটা কর দেয়ার মতো।  এটাও খামারীদের জন্য একটা বাড়তি খরচ।

একজন খামারীকে তার খামারে উৎপাদিত দুধ, মাংস, বাছুর, গোবর বাজারজাতকরণের জন্য অবশ্যই একটি পরিকল্পনা করা উচিত। পরিকল্পনার জন্য নিম্নের তথ্যগুলো জানা উচিতঃ

– পণ্য সংগ্রহের সময় প্রত্যাশিত মূল্য সম্পর্কে ধারণা রাখা, তা লাভজনক উপায়ে বিক্রয় করা যাবে কি না, আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান ।

– কোথায় বিক্রি করবে না করবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখা। 

– পণ্য সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাছাই, গ্রেডিং এবং প্যাকেজিং ভালোভাবে করা, যাতে গুনগত মান বজায় থাকে।

– পরিবহন কিভাবে করা হবে, এসময় প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করা যাতে নষ্ট না হয় ।

– কে বিক্রয় করবে – খামারীগণ নিজেরাই তো ব্যবসায়ী।

– বাজারজাতকরণের সময় “উচ্চ এবং কম” মূল্যের দ্রব্যাদি সরবরাহ এবং তাদের মধ্যে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা ।

– বাজারজাতকরণের খরচ – পণ্য সংগ্রহ, প্যাকেজিং, পরিবহন, কমিশন, বিক্রয়কারীর মজুরি এসব ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।

চিত্র্র:ডেয়রী মার্কেট চ্যানেল

চিত্র্র: ডেয়রী মার্কেট চ্যানেল

পণ্য উৎপাদনের পর খামারীরা যদি তা লাভজনক দামে বিক্রিই করতে না পারেন তাহলে সব কষ্ট বৃথা। এক্ষেত্রে আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হয়ে বরং অনেক অবনতি হয়। তাই সফল ব্যবসায়ী হতে গেলে বাজারজাত করণ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখতে হবে।