লাম্পি স্কিন ডিজিজ
লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি নামক রোগ সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি স্কিন ডিজিজ যা গরুর হয়ে থাকে। এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় না তবে এটি গরুর জন্য ক্ষতিকর এবং খামারের ক্ষতির কারণ। ১৯২৯ সালে জাম্বিয়ায় প্রথম অফিসিয়ালি শনাক্ত হওয়া এই রোগ ১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের গড় মৃত্যুহার আফ্রিকাতে ৪০%। আফ্রিকাতে অনেক বার মহামারী হিসেবে দেখা দিলেও আমাদের দেশে এখনো মহামারী আকারে দেখা যায়নি।
রোগের কারণ:
মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এল এস ডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে যে সময়ে মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার সেই সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রধান মাধ্যমগুলো হলো:
১। মশা ও মাছি: এই রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক মশা। মশা ছাড়াও অন্য কীট পতঙ্গের মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পারে।
২। লালা: আক্রান্ত গরুর লালা খাবারের মাধ্যমে অথবা খামারে কাজ করা মানুষের কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে।
৩। সিরিঞ্জ: আক্রান্ত গরুতে ব্যবহার করা সিরিঞ্জ অন্য গরুতে ব্যবহার করলে এই রোগটি বাহিত হতে পারে।
৪। সিমেন: ভাইরাস আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন এই রোগের অন্যতম বাহন, কারণ আক্রান্ত গরুর সিমেনেও এই ভাইরাস বিদ্যমান থাকে।
৫। রক্ষণাবেক্ষণকারী: খামারে কাজ করা মানুষের মাধ্যমেও এই রোগটি ছড়াতে পারে।
রোগের লক্ষণ:
লাম্পি স্কিন ডিজিজ এ আক্রান্ত গরুর ধারাবাহিক লক্ষণগুলো হলো:
১। আক্রান্ত গরু জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবারে রুচি কমে যায়।
২। জ্বরের সাথে সাথে মুখ দিয়ে এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দু’পায়ের মাঝ স্থান পানি জমে যায়।
৩। পাকস্থলী অথবা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
৪। শরীরের বিভিন্ন জায়গা চামড়া পিন্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়ে।
৫। ক্ষত স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে।
৬। শরীরে কোথায় ফুলে যায় যা ফেটে টুকরা মাংশের মত বের হয়ে ক্ষত হয়।
প্রতিরোধ:
১। আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত এলএসডি ভ্যাকসিন দেয়া।
২। যেহেতু মশার মাধ্যমে এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে, তাই গরু রাখার স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে মশার উপদ্রব না হয়৷
৩। আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা স্থানে নিয়ে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে৷
৪৷ আক্রান্ত গরুর দুধ বাছুরকে খেতে দেওয়া যাবে না। দুধ মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে।
৫। আক্রান্ত গরুর খাবার বা ব্যবহার্য কোনো জিনিস সুষ্ঠু গরুর কাছে না আনা।
৬। আক্রান্ত গরুর রক্ষণাবেক্ষণে হতে হবে সচেতন৷ আক্রান্ত গরুর কাছ থেকে সুস্থ গরুতে এই রোগ ছড়াতে পারে, তাই সুস্থ গরুর কাছে যাওয়ার আগে পোশাক পরিবর্তন করে নিতে হবে।
৭। আক্রান্ত গরুর খাবার বা ব্যবহার্য কোনো জিনিস সুষ্ঠু গরুর কাছে না আনা যাবে না।
৮। আক্রান্ত খামারে যাতায়াত বন্ধ করা এবং আক্রান্ত খামার থেকে আনা কোনো সামগ্রী ব্যবহার না করা।
চিকিৎসা:
ক্ষতস্থান টিনচার আয়োডিন মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া এলএসডি লক্ষণ প্রকাশ পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে৷