গরুর প্রজনন কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা
যেকোনো জিনিসের সফলতার অনেকাংশ নির্ভর করে তার কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনার উপর। তেমনি খামারীদের ক্ষেত্রে সফল ব্যবসায়ী হতে গেলে গরুর ব্রিডিং কার্যক্রম ব্যবস্থাপনাও অনেক জরুরী। ব্রিডিং কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে-
” নির্বিশেষে ভালো বাছুর পাওয়া এবং উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বংশের হাইব্রিড শক্তি অর্জন (বাছুরের মৃত্যুহার হ্রাস), আর্থিক লাভ ও প্রজননের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দুধ উৎপাদন করা। “
মূলত দু’টি পদ্ধতিতে গরুর ব্রিডিং কার্যক্রম ( প্রজনন পদ্ধতি) করা হয়ে থাকে। যথাঃ
১) প্রাকৃতিক প্রজনন পদ্ধতি বা Natural Insemination.
২) কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি বা Artificial Insemination.
প্রাকৃতিক প্রজনন পদ্ধতিঃ ষাঁড় দ্বারা প্রকৃতির নিয়মে গাভীতে বীজ স্থানান্তরণ পদ্ধতিকে প্রাকৃতিক প্রজনন পদ্ধতি বলে। এক্ষেত্রে অনেকসময় গাভী প্রসব নাও করতে পারে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মতো ব্যয়বহুল নয়।
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিঃ উন্নত জাতের ষাঁড় থেকে বীজ সংগ্রহ করে কৃত্রিম ভাবে গাভীতে স্থানান্তর পদ্ধতিকে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি বলে। এপদ্ধতিটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল। কিন্তু গাভীর জরায়ুতে ষাঁড়ের বীজ স্থানান্তর করা হয় বিধায় প্রসব করার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। উন্নত বীজ সরবরাহের দরুন ভালো জাতের বাছুর জন্ম নেয় এবং অধিক ফলন দিয়ে থাকে। (পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে)
এতো গেলো প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা। আলোচনার এ পর্যায়ে চলুন জেনে নেয়া যাক গরুর প্রজনন কার্যক্রমে কী কী বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে সে সম্পর্কেঃ
১) শুরুতেই খামারীদের ভালো ব্রিড, দুধের উৎপাদন ক্ষমতা এবং সংগৃহীত পশুর মূল্য বিবেচনা করে দুগ্ধজাত একটি উন্নত জাত নির্বাচন করতে হবে।
২) মূলত দুধ উৎপাদনের বংশগতীয় সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে গাভী কেনা উচিত (এজন্য গাভীর পূর্বপুরুষ এর তথ্য গবাদিপশু গবেষণাগার থেকে পরীক্ষা করা যেতে পারে)। তবে পশু নির্বাচনের অন্যতম উপাদান গুলি যথাযথ বিবেচনার সাথে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে সেরা প্রাণী নির্বাচন বা ক্রয় করতে হবে।
৩) খামারীদের যেকোনো একটি প্রজনন পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ একটি গাভীর উপর একাধিক পদ্ধতির প্রতিফলন ঘটালে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।
৪) গাভীর শক্তিশালী দিক এবং দুর্বল দিক গুলি মূল্যায়ন করতে হবে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে পরবর্তীতে গবাদিপশু লালন-পালনের যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।
৫) এমন ষাঁড় ব্যবহার করতে হবে যার বংশানু উন্নত মানের বাছুর উৎপাদনের নিশ্চয়তা দেয় এবং ভবিষ্যতে সর্বাধিক সম্ভাব্য অর্থনৈতিক লাভের সম্ভাবনা থাকে । তবে সিমেন ( ষাঁড়ের বীজ) এর দাম বিবেচনায় রাখতে হবে।
৬) একটি ভোজন এবং প্রজনন কার্যক্রম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে যা পশুপালনে প্রাণীদের জিনগত সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে।
প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমনঃ ইনব্রিডিং, লাইন ব্রিডিং, ক্রস ব্রিডিং ইত্যাদি। নিচের যেকোনো একটি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় :
- ইনব্রিডিংঃ এই পদ্ধতির মাধ্যমে একদম কাছের সম্পর্কিত প্রাণীদের মধ্যে মেটিং (mating) এর মাধ্যমে ব্রিডিং করানো হয়। কিন্তু এই প্র্যাক্টিস করা হয় না কারণ এতে পরবর্তী প্রজন্মে রোগ-বালাই এর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে এবং মৃত্যুহারও বেশি থাকে।
- লাইন ব্রিডিংঃ লাইন ব্রিডিং জিনগতভাবে সম্পর্কিত পিতামাতাদের মধ্যে প্রজননের পদ্ধতি। এটি দুগ্ধজাত প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে ( Dairy Industry) ব্যাপকভাবে অনুশীলন করা হয় এবং তুলনামূলকভাবে নিরাপদ প্রজনন কর্মসূচী।
- ক্রস ব্রিডিংঃ সম্পর্কহীন প্রাণীর মেটিং ( mating) কে ক্রস ব্রিডিং বলা হয়। এটি দুগ্ধ খামারে সর্বাধিক ব্যবহৃত সিস্টেম । এটি গাভীর মধ্যে নতুন জিনকে প্রবর্তন করতে সহায়তা করে কারণ এই পদ্ধতিতে অনেক রকমের বৈশিষ্টের সমন্বয় ঘটে । এটি ভালো প্রাণী উৎপাদনে সহায়ক পন্থা।
উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি গুলোর মধ্যে কর্মদক্ষতা এবং ঝুঁকিহীন প্রজনন কার্যক্রমের জন্য লাইন ব্রিডিং অধিক জনপ্রিয়।