স্টেরয়েড দেওয়া গরু কীভাবে চিনবেন?
সামনেই কোরবানীর ঈদ! মাসুম সাহেব হাটে গেলেন গরু ক্রয় করতে। অনেক ঘুরে শেষমেশ একটি গরু মাসুম সাহেবের খুব পছন্দ হয়। গরুটি বেশ হৃষ্টপুষ্ট, মোটাতাজাও। দামেও মোটামুটি সস্তা। তাই সময় নষ্ট না করে মাসুম সাহেব গরুটি কেনার জন্য মনস্থির করলেন। তখনি হঠ্যাৎ তার পুরনো বন্ধু জামিল সাহেবের সাথে দেখা। বন্ধুর কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি এই গরুটি কিনতে বারণ করে দেন। আর বলেন, গরুতে নাকি স্টেরয়েড দেওয়া যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ।
উপরের গল্পটি কাল্পনিক হলেও অবাস্তব নয়। আমাদের দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় গরুকে স্টেরয়েড দিয়ে থাকেন। এছাড়া কিছু হাতুড়ে ডাক্তার ও ওষুধ কোম্পানির প্ররোচনায়ও গরু ব্যবসায়ীরা এমনটি করে থাকেন। এই স্টেরয়েড শুধুমাত্র পশুর জন্যই যে ক্ষতিকর তা নয়! স্টেরয়েড প্রয়োগকৃত মাংস খেলে মানব শরীরেও দেখা দেয় নানা ধরনের জটিলতা।
স্টেরয়েড কী? এটি গরুতে ব্যবহার করলে কী ঘটে?
স্টেরয়েড মূলত হাঁপানির রোগে ব্যবহৃত একধরনের ঔষুধ। তবে এ জাতীয় ঔষুধ যেমনঃ ডেক্সামেথাসন, বেটামেথাসন, পেরিঅ্যাকটিন ইত্যাদি গরুতে অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারের ফলে গরুর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে শরীর থেকে পানি বের হতে পারেনা। এ পানি শোষিত হয়ে সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা দেখায়।
স্টেরয়েড দেওয়া গরু কেন আমাদের শরীরের জন্য হুমকিস্বরুপ?
স্টেরয়েড দেওয়া গরু কেন আমাদের জন্য ক্ষতিকর এমন প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকেরই জানা নেই। স্টেরয়েড দেওয়া গরুর মাংস খেলে আমাদের কিডনী, লিভার, ক্যান্সার, পুরুষত্বহীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। এমনকি এ ধরনের মাংস খাওয়ার ফলস্বরুপ মহিলাদের গর্ভধারণের ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া স্টেরয়েড দেওয়া গরু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারা যাবে। কারণ এর শরীরে ভয়ংকর রাসায়নিক হরমোন দেওয়া হয় যা আগুনেও নষ্ট হয়না। এমনকি এ ধরনের পশুর মাংস রান্না করলেও স্টেরয়েডের ক্ষতিকর প্রভাব নষ্ট হয়না। তাই স্টেরয়েড জাতীয় গরু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ।
নিজের স্বাস্থ্য সুন্দর রাখতে এবং ভবিষ্যতে কোনো জটিল সমস্যায় না ভুগতে চাইলে কোরবানীর গরু কিনতে গেলে অবশ্যই যাচাই করতে হবে গরুটি স্টেরয়েড প্রয়োগকৃত কিনা! আমাদের দেশের বেশিরভাগ গরু ক্রেতা জানেন না কীভাবে স্টেরয়েডকৃত গরু শনাক্ত করতে হয়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক স্টেরয়েড দেওয়া গরু চেনার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে।
স্টেরয়েড দেওয়া গরু যেভাবে চিনবেনঃ
আঙুলের চাপঃ
এ ধরনের পশু খুব চুপচাপ থাকবে। এদেরকে দেখেই নির্জীব মনে হয়। এ ধরনের পশুর উরুতে অনেক মাংস দেখা যায় কিন্তু আঙুল দিয়ে চেপে ধরলে স্থানটি দেবে যাবে এবং আগের অবস্থানে ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে লালনকৃত গরুর কোনো স্থানে চেপে ধরলে তা অনেক বেশি দেবে যাবে না। এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে সময় লাগবে না।
তাপমাত্রাঃ
গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যদি বেশি থাকে তাহলে গরুটি অসুস্থ। এ ধরনের গরুকে সবসময় বাতাসে রাখতে হয় এবং এরা রোদ সহ্য করতে পারে না।
কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে লালনকৃত মোটা গরুর ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না।
ক্লান্তিঃ
স্টেরয়েড প্রয়োগকৃত গরু অনেক নির্জীব থাকে। এরা নড়াচড়া কম করে। এরা এমনকি মাছি তাড়ানোর জন্যও লেজ নড়াতে চায় না।
প্রাকৃতিক উপায়ে পালিত গরু চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। এদের গায়ে হাত দিলে এরা তেড়েও আসতে পারে।
ঘনঘন শ্বাসপ্রশ্বাসঃ
এ ধরনের গরু শ্বাসপ্রশ্বাস অনেক ঘনঘন। এরা একটু হাটলেই হাঁপাতে থাকে। এদের চোখ ফ্যাকাশে থাকে এবং সর্বদাই ক্লান্তি ভাব কাজ করে।
হাড় বেরিয়ে না থাকাঃ
স্টেরয়েড প্রয়োগকৃত গরুর পাজরের হাড় দেখা যায় না। অন্যদিকে প্রাকৃতিক উপায়ে লালনকৃত গরুর চেহারা স্বাভাবিক উষ্কখুষ্ক এবং চামড়ার ওপর দিয়ে হাড় বেরিয়ে থাকে।
নাকের ওপরের অংশ ভেজাঃ
অসুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ থাকবে শুকনা। অন্য দিকে সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে।
রানের মাংসঃ
স্টেরয়েড দেওয়া গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর তুলনায় অনেক নরম থাকে।
গরু কেনার সময় এখন থেকেই থাকুন সতর্ক এবং সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই চিনে নিন স্টেরয়েডযুক্ত গরু।