কী দেখে কুরবানির গরু কিনবেন?
গরুর বয়স ন্যূনতম দুই বছর হলেই এটা কোরবানির জন্য উপযুক্ত হবে। গরুর বয়স জানার সবচাইতে ভালো উপায় হল এর দাঁত পর্যবেক্ষণ করা। গরুর দাঁতের সংখ্যা এবং সেই দাঁতের ক্ষয়ের পরিমাণ দেখে নির্ণয় করা যায় তার বয়স। আমাদের যেমন দুধ দাঁত রয়েছে তেমন অস্থায়ী দাঁত গরুরও রয়েছে। স্থায়ী দাঁতের থেকে এগুলোকে সহজেই আলাদা করা যায় কারণ এগুলো আকারে ছোট এবং তুলনামুলকভাবে বেশি সাদা। একটা পূর্ণবয়স্ক গরুর মুখের ভেতরে ৩২ টা দাঁত থাকে। নিচের পাটিতে সামনের দাঁত বা কর্তন দন্ত থাকে ৮ টা।
- জন্ম থেকে এক মাস বয়সের মাঝে অস্থায়ী দাঁত উঠতে শুরু করে। এক মাসের মধ্যে নিচের পাটির সামনের আটটা অস্থায়ী দাঁত উঠে যায়।
- এক বছর বয়সে সামনের মাঝের দুটো অস্থায়ী দাঁত পড়ে যায় ও সেখানে স্থায়ী দুটো দাঁত ওঠে যেগুলো আকারে পাশের দাঁতগুলোর থেকে বড়। দুই বছর বয়সের মাঝে এই দুটো দাঁত বেশ বড় আকার ধারণ করে।
- দুই বছর থেকে আড়াই বছরের মাঝে সামনের দুইটা দাঁতের দুই পাশে আরও একটা করে স্থায়ী দাঁত ওঠে ফলে সামনে স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা হয় চারটা। তিন বছরের মাঝে এই পাশের দুইটা দাঁতও সম্পূর্ণ আকৃতি ধারণ করে।
- তিন বছরের মাঝে পাশে আরও দুইটা দাঁত ওঠে ফলে সামনে স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা হয় ছয়টা। সাড়ে তিন বছরের মাঝে এই দুটা পূর্ণ আকৃতি ধারণ করে।
- চার থেকে পাঁচ বছরের মাঝে সামনে আটটা স্থায়ী দাঁতই উঠে যায়।
- পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সে একেবারে সামনের দুটো দাঁত ক্ষয় হতে হতে সমান হয়ে যায় এবং পাশের বাকি দাঁতগুলোতেও ক্ষয়ের চিহ্ন দেখা যায়।
গরু বাহ্যিকভাবে দেখতে সুস্থ-সবল কিনা সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভালো দাম পাওয়ার আশায় প্রতি বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে একদল অসাধু ব্যবসায়ি কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গরু মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করেন।এতে গরুর শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে শুরু করে। এ কারণে রাসায়নিক দেয়া গরু বেশি মোটা দেখায়। এদের গায়ে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে সেখানে দেবে গর্ত হয়ে থাকে অথবা সাথে সাথে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।
ওষুধ ও রাসায়নিকের প্রভাবে মোটা হওয়া গরু অতিরিক্ত ওজনের কারণে চলাফেরা বা স্বাভাবিক নাড়াচাড়া করতে পারেনা। রাসায়নিকযুক্ত গরু ভীষণ ক্লান্ত থাকবে এবং ঝিমাবে। সুস্থ গরুর গতিবিধি চটপটে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কান ও লেজ দিয়ে মশা মাছি তাড়ায়। সীমান্ত পার হয়ে আসা বাইরের গরুগুলোও ভ্রমণজনিত ক্লান্তির কারণে ক্লান্ত থাকে।এধরণের ঝিমাতে থাকা গরু সুস্থ নাকি অসুস্থ সেটা বোঝা বেশ কঠিন। তাই দেশি গরু কেনা ভালো সিদ্ধান্ত।
রাসায়নিক বা ওষুধ খাওয়ানো গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলো শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়। মনে হবে যেন হাঁপাচ্ছে। গরুটির কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃত নষ্ট হতে থাকে এবং গরুটি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায়। এছাড়া অনেক গরু খুড়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকে।চামড়ায় কাটা ক্ষত দেখে নিতে হবে। দেখতে হবে কান কাটা, শিং ভাঙা, লেজ কাটা, খুরের মধ্যে ক্ষত বা জিহ্বায় ঘা আছে কি না। এছাড়া অনেক গরু কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ ধরণের গরু বেশ বিবর্ণ ও হাড় জিরজিরে হয় বলে তিনি জানান।
গাভি বা বকনা গরু না কেনাই ভালো। নিতান্তই কিনতে হলে পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে পশুটি গর্ভবতী কি না। গর্ভবতী পশু কোরবানি হয় না।
পশুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় এবং নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেয়া গরুর মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরবে। কিছু খেতে চাইবে না।
গরুর কুঁজ মোটা টানটান হলে গরু সতেজ, সুস্থ হয়। সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে। সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটা ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে। অন্যদিকে অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনা। সুস্থ গরুর রানের মাংস শক্ত থাকবে। যেখানে রাসায়নিক দেয়া গরুর পা হবে নরম থলথলে।