বকনা গাভীর গরম হওয়া এবং পাল দেয়া
গাভীকে পাল দেয়ার আগে তাকে প্রজননের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। অর্থাৎ গরম করতে হবে। কারণ গাভীকে গরম না করে তাতে পাল দিলে প্রজনন ঘটানোয় ঝুঁকি থেকে যায়। এ পর্যায়ে আমরা বকনা গাভীর গরম হওয়া এবং সে অনুযায়ী পাল দেয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবোঃ
আলোচনার বিষয়বস্তুঃ
১. বকনা বা গাভী গরম হওয়ার লক্ষণ
২. বকনা বা গাভী গরম হওয়ার পর করণীয়
৩. কিভাবে বোঝা যাবে গাভী গর্ভধারণ করেছে কিনা
- বাহ্যিক পরিবর্তন
- অভ্যন্তরীন পরিবর্তন
বকনা বা গাভী গরম হওয়ার লক্ষণঃ-
কীভাবে বুঝবো গাভীটি গরম হয়েছে কি না?
বকনা বা গাভী গরম হলে বিভিন্ন ধরনের স্বভাবগত ও শরীরবৃত্তীয় লক্ষণ ও পরিবর্তন দেখা দেয়। এগুলো হলোঃ
১) বকনা বা গাভী অশান্ত থাকবে এবং একজায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে ছটফট করবে।
২) গরম হওয়ার শুরুতে নিজে অন্য প্রাণির উপর লাফ দিবে এবং পুরোপুরি গরম অবস্থায় অন্য প্রাণিকে
নিজের উপর লাফ দিতে উদ্বুদ্ধ করবে।
২) অন্য প্রাণিকে নিজের পশ্চাৎদেশ চাটতে দিবে।
৩) খাওয়ার আগ্রহ কমে যাবে ও দুধালো গাভীর ক্ষেত্রে হঠাৎ করে দুধ দেয়া কমে যাবে।
৪) বকনা বা গাভীকে খুব সতর্ক মনে হবে এবং সবসময় কান খাড়া করে থাকবে।
৫) ঘনঘন অল্প পরিমাণে প্রস্রাব ও পায়খানা করবে।
৬) লেজ নাড়তে থাকবে।
৭) যোনি পথ দিয়ে স্বচ্ছ মিউকাস বা শ্লেষ্মা বের হবে।
৮) হাত দিয়ে যোনিমুখ সামান্য ফাঁক করলে ভেতরটা অন্য সময়ের চেয়ে বেশী লালচে দেখাবে।
৯) স্পেকুলামের সাহায্যে সার্ভিক্সের মুখ দেখলে মনে হবে সার্ভিক্স খোলা রয়েছে।
১০) বকনা বা গাভী হাম্বা হাম্বা করে অনবরত ডাকতে থাকবে।
১১) রক্তে প্রথমে ইস্ট্রোজেন ও পরে লিউটিনাইজিং হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাবে।
বকনা বা গাভী গরম হওয়ার পর করণীয়ঃ-
১.কখন পাল দেয়া উচিতঃ বকনা বা গাভী গরম অবস্থায় প্রধান কাজ হলো পাল দেওয়া। এজন্য প্রথমেই পাল দেওয়ার উপযুক্ত সময় নির্ণয় করতে হবে। সাধারণতঃ গাভী গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাবার পর থেকে পরবর্তী ১৮ ঘন্টার মধ্যে পাল দিলেই চলে।
২. পাল দেয়ার সময়সীমাঃএস্ট্রাস ধাপ শুরু হওয়ার ৮ ঘন্টা পর গাভীতে গরম হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং পরবর্তী ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত গরম অবস্থা স্থায়ী থাকে। এরপর থেকে গরম অবস্থা চলে যেতে থাকে। তাই যথাসময়ে গাভীকে পাল দিতে হবে।
৩.সফলতার হারঃ গরম অবস্থায় আসার শুরু থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে পাল দিলে সফলতার হার হবে শতকরা ৪৫ – ৭০ ভাগ আর ৭ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে পাল দিলে শতকরা ৭০ – ৯০ ভাগ পর্যন্ত সফলতা পাওয়া যাবে। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে পাল দিলে। ১৮ ঘন্টার পর পাল দিলে ক্রমান্বয়ে সফলতার হার কমতে থাকবে।
কিভাবে বোঝা যাবে গাভী গর্ভধারণ করেছে কিনা
কয়েকটি পদ্ধতি দ্বারা গাভীর গর্ভাবস্থা নির্ণয় করা যায়। যেমনঃ
১। বাহ্যিক লক্ষণ দেখে।
২। হাত দিয়ে অভ্যন্তরীন পরিবর্তন অনুভব করে।
- বাহ্যিক পরিবর্তন
১। গাভীর ইস্ট্রাস চক্র বন্ধ হবে, ডাকে আসবে না।
২। ষাঁড় এড়িয়ে চলবে এবং ষাঁড় ও গাভীর কাছে আসবে না।
৩।গাভী শান্ত হয়ে যাবে। চেহারা উজ্জ্বল হতে থাকবে ও পশম চকচকে হবে।
৪। গাভীর পেট ক্রমশঃ বড় হতে থাকবে এবং শেষ দিকে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝা যাবে।
৫। গাভীর দুগ্ধ উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমে যাবে।
৬। যোনিমুখ ক্রমশঃ ফুলা ফুলা ও নরম হতে থাকবে।
৭। ওলান ক্রমেই বড় হতে থাকবে ও বাট দিয়ে দুধের মত কস বের হবে।
- অভ্যন্তরীন পরিবর্তন
রেকটাল পালপেশন পদ্ধতিতে গর্ভবতী গাভীর অভ্যন্তরীন পরিবর্তন পরীক্ষা করা হয় এবং এটা প্রজননের ৬-১২ সপ্তাহ পর করতে হবে। এজন্য যা যা করণীয় তা হলোঃ
১। জরায়ুর গ্রীবা বন্ধ হবে।
২। ডিম্বাশয়ে কারপাস লুটিয়াম বড় হতে থাকবে।
৩। ৯০ দিনের মধ্যে জরাযুর হর্ণ-দ্বয়ের আকারে অসামঞ্জস্যতা বোঝা যাবে অর্থাৎ গর্ভধারনকৃত হর্ণ-এর বৃদ্ধি হতে থাকবে।
৪। ৩ মাস ১৫ দিন হতে ৪ মাসের মধ্যে জরায়ুর ধমনীর স্পন্দন স্পষ্ট বোঝা যাবে।
৫। বাচ্চা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে পেটের দিকে নেমে যাবে এবং গর্ভবস্থার শেষ পর্যায়ে পেলভিক কেভিটি-তে চলে আসবে।