গাভীর খাদ্য তালিকায় কাঁচা ঘাস কেনো দরকার

Published by Khamar-e Agro Research Team on

গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহরের বড় বড় মাঠে গবাদিপশুর অবাধ বিচরণ দেখা যায়।  গৃহিণী কিংবা রাখাল সকালে মাঠে খুঁটি বেধে দেয় এবং সূর্যাস্তের আগে আগে পশুগুলোকে গোয়ালঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের দৈনন্দিন রুটিনের একটা অংশ। এর কারণ কি শুধুই খামারীদের খরচ কিছুটা কমানো? ” না “; মূলতঃ ঘাস জাতীয় খাবার গ্রহণে গবাদিপশুর অনেক উপকার হয়ে থাকে।  এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতেই আমাদের আজকের আলোচনা, “গাভীর খাদ্য তালিকায় কাঁচা ঘাস কেনো দরকার?”-

আজকের আলোচনাকে আমরা মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি। 

১.প্রাণিকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস দেয়ার গুরুত্ব

২.সঠিক পরিমাণে  কাঁচাঘাস না দিলে কি কি অপকারিতা হয় এবং 

৩.খাদ্য ব্যবস্থাপনার কিছু টিপস।

চলুন শুরুতে জেনে নেই, প্রাণিকে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস দেয়ার গুরুত্বঃ

১। কাঁচাঘাসে আছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন।  যে কারণে গাভীকে বেশি বেশি কাঁচাঘাস খাওয়ালে অধিক দুধ পাওয়া যাবে। 

২। মাঠেঘাটে অনেক কাঁচাঘাস জন্মায়। আবার নিজেদের জায়গাজমিতেও কৃত্রিম ঘাস পাওয়া যায় যার খরচ তুলনামূলক কম। তাই গবাদিপশুকে ঘাস খাওয়ালে খাদ্য খরচ তুলনামূলক কমে যাবে।

৩। কাঁচাঘাসে এক ধরণের পদার্থ আছে যা প্রজননতন্ত্র সক্রিয় করে এবং গাভীর গর্ভধারণ করা সহজতর হয় । এতে করে গাভী সুস্থ সবল বাছুর জন্ম দিবে।

৪। জননতন্ত্র গঠনে পুষ্টি জোগায় বিধায় গাভীকে বেশি বেশি কাঁচাঘাস খাওয়ালে সঠিক বয়সে যৗেন পরিপক্কতা আসবে।

৫। কাঁচাঘাসের পুষ্টিগুন গাভীকে এতো সতেজ এবং জননাঙ্গ এতো সক্রিয় করে যে জন্মের সময় বাচ্চার মৃত্যু হার খুবই কম হবে, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও কমে যাবে।

৬। অধিক সক্রিয় এবং পুষ্টি পায় বিধায় বাচ্চা জন্মের সময় গাভীর মৃত্যু হার খুবই কমে যাবে, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেক কম।

৭। যেহেতু দিনের অধিকাংশ সময় কাঁচাঘাস খেয়ে অতিবাহিত করা যায় তাই গবাদিপশুর দানাদার খাদ্যের প্রয়ােজনীয়তা কম হবে, ফলে উৎপাদন ব্যয়ও কমে যাবে।

৮। কাঁচাঘাস গবাদিপশুকে এক ধরণের পুষ্টি জোগায় যে কারণে সদ্য জন্ম নেয়া বাছুরের দৈহিক ওজন কাংখিত মাত্রায় পাওয়া যাবে।

৯। পশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার কারণে রােগ-ব্যাধি কম হয় ফলে ঔষধ খরচ কমে যাবে এবং চিকিৎসা খরচ খুবই কম হবে।

১০। দুধ উৎপাদন বেশী হলে গরিব কৃষক দুধ বিক্রয়ের পাশাপাশি নিজেরাও দুধ খেতে পারবেন এবং নিজেরাও সুস্থ সবল থাকবেন। এতে করে আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি নিজেদেরও পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। 

১১। ঘাসের বাজারদর এবং এর চাহিদা ব্যাপক। এক একর জমিতে ধান চাষ করে যে লাভ পাওয়া যায়, ঘাস চাষ করলে তার চেয়েও বেশী লাভ পাওয়া যাবে।

আমরা বুঝতে পারলাম কাঁচাঘাসের অনেক অনেক উপকারিতা আছে ।  আসুন এবার জেনে নেয়া যাক সঠিক পরিমাণে  কাঁচাঘাস না দিলে কি কি অপকারিতা হয় সে সম্পর্কেঃ 

– দুধ উৎপাদন কম হবে।

–  প্রাণি অপুষ্টিতে ভােগে এবং রােগ-ব্যাধি বেশী হবে।

–  গাভির প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং ঘন ঘন প্রজনন করতে হবে; যা গাভীর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। 

–  গভর্পাতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

–  দুর্বল ও কম ওজনের বাছুরের জন্ম হবে। ফলে বাছুরের মৃত্যু হার বেড়ে যাবে।

–  যৗেন পরিপক্কতা দেরিতে আসবে।

–  দুর্বলতার কারণে রােগ-ব্যাধি বেশী হওয়াতে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাবে।

–  রােগ হলে উৎপাদন কমে যাবে ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

– বাছুরের পরবর্তীতে আশাতিত ওজন পাওয়া যাবে না এবং উক্ত বাছুর থেকে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যাবে না।

-দানাদার খাদ্য বেশি দরকার হয় ফলে গাভী পালনের খরচ বেড়ে যায়।

 চিত্রঃ জার্মান ঘাস    চিত্রঃ নেপিয়ার ঘাস

চিত্রঃ জার্মান ঘাস                                                                                চিত্রঃ নেপিয়ার ঘাস

গাভীকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে গেলে কী কী খাদ্য উপকারী তা জানার পাশাপাশি এর ব্যাবস্থাপনার দিকেও দৃষ্টিপাত করতে হবে। চলুন এখন জেনে নেয়া যাক খাদ্য ব্যবস্থাপনার কিছু টিপসঃ

  • নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। এতে করে পশুর হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। 
  • গরুর সম্মুখে সর্বদা খাদ্য রাখতে হবে। তাহলে যখন ক্ষুধার্ত থাকবে তখন নিজের চাহিদা মতো খাবার গ্রহণ করতে পারবে। 
  • খাদ্য সরবরাহের আগে অবশ্যই পাত্র পরিষ্কার করতে হবে। নোংরা পাত্র থেকে নানান ধরণের রোগবালাই দেখা দিতে পারে। 
  • দানাদার খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মেপে ২ বারে (সকালে ও বিকালে) পরিবেশন করতে হবে।
  • দানাদার খাদ্য আধা ভাঙ্গা অবস্থায় ভিজিয়ে খেতে অভ্যস্ত হলে সেভাবে দেয়া।
  • শুকনা দানাদার খাদ্য দিলে খাদ্য গ্রহণের পরপরই পানি দেয়ার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে । নতুবা খাবার গলায় আটকে গেলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 
  • খড় কেটে ভিজিয়ে পরিবেশন করলে কম নষ্ট হয় এবং খাদ্য গ্রহণের হারও বেড়ে যায় ।
  • খাদ্য অবশ্যই মাটি/বালি মুক্ত থাকা, খাদ্য পচা, বাসি, অতি পুরাতন না হওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। 

মানুষের বেঁচে থাকতে যেমন পানির কোনো বিকল্প নেই, তেমনি গাভীর সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে উঠতেও কাঁচা ঘাস অপরিহার্য। তাই অধিক ফলন লাভে খামারীদের নিয়মিত এবং অধিক পরিমাণে গবাদিপশুর খাদ্য তালিকায় কাঁচা ঘাস সংযুক্ত করতে হবে। 

 

Categories: DairyFattening