বাছুরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

Published by Khamar-e Agro Research Team on

খামার শুরুর পূর্বাবস্থায় খামারীরা অনেক দ্বিধায় থাকেন যে বাছুরকে কী খাওয়াবে এবং কী খাওয়াবে না এ ব্যাপারে। এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতেই আমাদের এবারের আলোচনা “বাছুর কী খাবে কী খাবে না”

 

১। জন্মের পর থেকে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরের খাবারঃ
বাছুরের জন্মের পর থেকে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত বাছুরকে যতটুকু পুষ্টিসাধন করা হবে পরবর্তী জীবনকালের বৃদ্ধি  ও উৎপাদন তার উপর সিংহভাগ নির্ভর করবে। জন্মের প্রথম দিন থেকে সাধারণতঃ ৩ মাস বয়স পর্যন্ত  বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি ও ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। এ সময় যদি শরীরে পুষ্টির অভাব হয় তবে এর যৌনাঙ্গের বিকাশ, যৌবন প্রাপ্তি দেরীতে আসবে যার ফলে গর্ভধারণ ও বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে।

২। জন্মের পরপরই বাছুরের খাবার-দাবারঃ
জন্মের পরপরই বাছুরকে গাভীর শাল দুধ খাওয়াতে হবে। অর্থাৎ বাছুর জন্মানাের আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টার মধ্যে শাল দুধ খাওয়াতে শুরু হবে। শাল দুধ খাওয়ানাের নিয়ম হলাে, বাছুরের ওজন ১০ কেজি হলে ১ কেজি শাল দুধ, বাছুরের ওজন ২০-২৫ কেজি হলে ১.২-১.৫ কেজি শাল দুধ খাওয়াতে হবে।

৩। কীভাবে বাছুর গাভীর দুধ পান করবে?
বাচ্চাকে গাভী থেকে দুধ চুষে খেতে দিতে হবে । এতে গাভী বেশী দুধ দিবে এবং গাভী দেরীতে দুধ দেয়া বন্ধ করবে। সাধারণতঃ বাছুরকে দুবেলা দুধ খেতে দিতে হবে এবং নিয়মিত একই সময়ে দুধ খাওয়াতে হবে। এতে করে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এবং ফলন ভালো আসে। 

৪। গাভীর দুধের পাশাপাশি বাছুর কী খাবে?
বাছুরকে দুই সপ্তাহ পর দুধ সরবরাহের সাথে সাথে অল্প পরিমাণ কচি ঘাস ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানাে প্রয়ােজন। তা না করা হলে বাছুরের হজম ক্ষমতা কমে যাবে এবং পাকস্থলির পরিপক্কপতা দেরীতে আসবে।

জন্ম থেকে গাভীর দুধ পান ছাড়া পর্যন্ত বাছুরকে কতোটুকু দুধ, দানাদার ও ঘাস সরবরাহ করতে হবে এর তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ

 

বয়স  দৈনিক   দানাদার ও ঘাস সরবরাহ 
০-৭ দিন (১ম সপ্তাহ) ২ লিটার এ বয়সে দানাদার ও খড় ঘাসের প্রয়ােজন নেই।
২য় সপ্তাহ ৩ লিটার দানাদার খাদ্য অর্থাৎ কাফ স্টার্টার (২০% আমিষ সমৃদ্ধ) এবং 

কিছু কচি সবুজ ঘাস বাছুরকে সরবরাহ করতে হবে।

৩য়-১২ সপ্তাহ

(৩ মাস)

৪ লিটার ১। দৈনিক ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য এবং ১ কেজি হারে উচ্চ 

মানের কচি নরম সবুজ ঘাস দিতে হবে।

২। দানা খাদ্যে আমিষের ভাগ ২০% এর কম এবং আঁশের ভাগ 

১০% এর উপরে থাকবে না।

১৩-১৬ সপ্তাহ 

(৪ মাস)

৩ লিটার ১। দৈনিক ০.৭৫ কেজি দানাদার খাদ্য এবং ৩ কেজি সবুজ 

কাঁচা নরম ঘাস দিত হবে।

২। দানা খাদ্যে আমিষের ভাগ ২০% এর কম এবং আঁশের ভাগ 

১০% এর উপরে থাকবে না।

১৭-২০ সপ্তাহ

(৫ মাস)

২ লিটার ১। দৈনিক ১.০-১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য এবং ৭ কেজি সবুজ 

কাঁচা নরম ঘাস দিতে হবে।

২। দানা খাদ্যে আমিষের ভাগ ২০% এর কম এবং আঁশের ভাগ 

১০% এর উপরে থাকবে না।

২১-২৪ সপ্তাহ  ১ লিটার ১। দৈনিক ১.০-১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য এবং ৭ কেজি সবুজ 

কাঁচা নরম ঘাস দিতে হবে। ৬ মাস এর পর থেকে বাছুরকে 

দুধ খাওয়ানাের প্রয়ােজন হয় না। 

২। দানা খাদ্যে আমিষের ভাগ ২০% এর কম এবং আঁশের ভাগ 

১০% এর উপরে থাকবে না।

২৫-৩৫ সপ্তাহ  দুধ পান বন্ধ করতে হবে। ১। দৈনিক ১.০-১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য এবং ৭ কেজি 

সবুজ কাঁচা নরম ঘাস ও কিছু খড় দিতে হবে। 

২। দানা খাদ্যে আমিষের ভাগ ২০% এর কম এবং আঁশের 

ভাগ ১০% এর উপরে থাকবে না।

৩। বাছুর গরুর বয়স ছয় মাস পার হলে তার ওজনের ১% 

ইউএমএস দানাদার খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে 

হবে।

৩৬-৫০ সপ্তাহ         ঐ ১। দৈনিক ১.৫-২.০ কেজি দানাদার খাদ্য এবং ১০-১২ 

কেজি সবুজ কাঁচা নরম ঘাস ও ১-২ কেজি খড় দিতে 

হবে। 

২। দানা খাদ্যে আমিষের ভাগ ২০% এর কম এবং আঁশের 

ভাগ ১০% এর উপরে থাকবে না। 

৩। বাছুর গরুর ওজনের ১% ইউএমএস দানাদার খাবারের 

সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

বাছুরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে দানাদার খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য মিশ্রণের তালিকা নিচে আলোচনা করা হলোঃ

    দানাদার খাবার    পরিমাণ 
১. গমের ভুষি 

২. ডালের ভুষি 

৩. ছােলা ভাংগা 

৪. তিলের খৈল 

৫. মাটি কলাই ভাংগা 

৬. ভুট্টা ভাংগা 

৭. খনিজ দ্রব্য 

৮. লবণ

 

মােট =

৪০%

১৫%

১০%

১৫%

১০%

৫%

৪%

১%

১০০%

 

বাছুরের সুষ্ঠু বিকাশে পর্যাপ্ত খাবারের কোনো বিকল্প নেই। আশা করছি আজকের আলোচনার দ্বারা খামারীরা এ ব্যাপারে উপকৃত হবেন। 

 

বাছুরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

বাছুরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা