বকনা গাভীর বন্ধ্যাত্বের কারণ ও প্রতিকার

Published by Khamar-e Agro Research Team on

একজন গাভী পালনকারীর নিকট সময় মত গাভীর গর্ভধারণ করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ একমাত্র গর্ভধারণের মাধ্যমেই খামারীর ছোট খামার বিস্তার লাভ করে এবং গাভী দুগ্ধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। এতে করে খামারীদের রুজিরোজগার হয়ে থাকে। কিন্তু গাভী যদি সন্তান জন্ম দিতে না পারে তাহলে খামারীদের অনেক লোকসান হয়ে থাকে। এই সন্তান উৎপাদনে অক্ষমতাকে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা বলে। একটি গাভীতে বিভিন্ন কারণে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যেতে পারে। যেমন-

১. শারীরিক গঠন জনিত সমস্যা  

২. দুর্ঘটনা জনিত কারণ 

৩. শারীরবৃত্তীয় কারণ 

৪. মনস্তাত্ত্বিক 

৫. পুষ্টিগত কারণে অর্থাৎ অপুষ্টির শিকার হলে

৬. বংশগত কারণ এবং 

৭. ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা 

 

আসুন এবারে উপরে বর্ণিত কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাকঃ

শারীরিক গঠন জনিত সমস্যাঃ  শরীরের অনেক জন্মগত বা বংশগত ত্র“টিজনিত কারণে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা হয়। যেমন- ডিম্বাশয়, সার্ভিক্স ইত্যাদির অস্বাভাবিকতা। গাভীর জমজ বাচ্চা জন্মের ফলে একটি এড়েঁ অন্যটি বকনা হলে সাধারনতঃ ৯১% ভাগ ক্ষেত্রে বকনা বাছুরটিকে বন্ধ্যা হতে দেখা যায়, একে ইংরেজীতে Free Martin বলে। অনেক প্রাণিতে আবার অংগের কোন একটি অংশ থাকে না বা ঠিক মত বিকাশ লাভ করে না, এসব ক্ষেত্রেও প্রাণি বন্ধ্যা হয়। ক্রোমোজম সংখ্যার তারতম্য হলেও প্রাণি বন্ধ্যা হয়।

দূর্ঘটনা জনিত কারণঃ প্রজনন তন্ত্রে যে কোন ধরনের আঘাতের ফলে অথবা জরায়ুর বহির্গমন, যোনির বহির্গমন ইত্যাদির কারণে গাভী বন্ধ্যা বা অনুর্বর হতে পারে।

শারীরবৃত্তীয় কারণঃ বিভিন্ন হরমোনের অভাব ও অনিয়মিত ক্ষরণের ফলে গাভীতে বন্ধ্যা বা অনুরবরতা দেখা দেয়। যেমন- ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন, লিউটিনাইজিং হরমোন, প্রোজেষ্টেরন হরমোন ইত্যাদি। এছাড়াও ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন রোগ যেমন- স্থায়ী করপাস লিউটিয়াম, সিষ্ট, ফলিকুলার এট্রফি ইত্যাদি।

পুষ্টিগত কারণে অর্থাৎ অপুষ্টির শিকারঃ সুষম খাদ্যের অভাবে গাভীতে বন্ধ্যা বা অনুরর্বরতা দেখা যায়। যেমন- ভিটামিন-এ, ডি,ই  এবং খনিজ পদার্থের মধ্যে ফসফরাস, কপার, কোবাল্ট ইত্যাদির অভাবে বন্ধ্যা বা অনুরর্বরতা দেখা যায়। ক্যালসিয়ামের অভাবে বন্ধ্যাত্বের কোন প্রমাণ নেই তবে ফসফরাস শরীরে কাজে লাগার জন্য খাদ্যে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। প্রাণির খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত ২ঃ১ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

মনস্তাত্বিকঃ ভয় বা স্নায়ুবিক উত্তেজনার ফলে প্রাণির গর্ভধারন বিঘ্নিত হতে পারে। বিশেষতঃ বকনার ক্ষেত্রে প্রজনন ভীতি বা অস্থিরতা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনার বশে এ ধরনের অনুর্বরতা দেখা যায়।

রোগ জনিতঃ বিভিন্ন সংক্রামক যৌন রোগ যেমন-ব্রুসেলোসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, ভিব্রিওসিস, লেপটোসপাইরোসিস ইত্যাদি রোগ অথবা জনন তন্ত্রের অন্যান্য যেমন- মেট্রাইটিস, সার্ভিসাইটিস, পায়োমেট্রা, সালফিনজাইটিস ইত্যাদি রোগে গাভী বন্ধ্যা বা অনুর্বর হয়।

বংশগতঃ অনেক সময় বংশগত কারণে প্রাণি বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যায়। যেমন- Free Martin বা White Hএifer Disease হলে প্রাণি বন্ধ্যা হয়।

ক্রটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাঃ লালন-পালন ও ব্যবস্থাপনাগত ক্রটির কারনে বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা দেখা যায়। যেমন অযত্ন, অবহেলা, অপর্যাপ্ত খাদ্য, অনিয়মিত দুধ দোহন, প্রসবকালীন অবহেলা, ইত্যাদি।

অন্যান্যঃ বিভিন্ন বিষয় যেমন- প্রাণির বয়স,ঋতু, তাপমাত্রা, আলো ইত্যাদি প্রাণির উর্বরতার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সাধারণতঃ ৪ বছর বয়স পর্যন্ত গাভীর উর্বরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও ৬ বছর পর্যন্ত তা বিরাজ থাকে। কিন্তু ৬ বছর পর থেকে উর্বরতা হ্রাস পেতে থাকে। গাভী সাধারণতঃ বসন্তকালে অধিক উর্বর  থাকে

 

গাভীর বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ সমূহঃ

১। বাচ্চা প্রসবের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে গাভী গরম না হওয়া।

২। সব সময় গরম থাকা বা অনিয়মিতভাবে গরম হওয়া।

৩। ১৫ দিনের কম সময় বা ২৮ দিনের বেশি সময় পর পর গরম হওয়া।

৪। দীর্ঘদিন অর্থাৎ এক বছর বা অধিক সময়কাল গরম না হওয়া।

৫। স্ত্রী প্রজনন তন্ত্র থেকে ঘােলা, পুঁজ বা রক্ত মিশ্রিত মিউকাস নির্গত হওয়া।

৬। গর্ভপাত হওয়া।

৭। তিন বারের অধিক প্রজননের পরও গর্ভধারণ না করা।

৮। গর্ভফুল না পড়া, জরায়ু বের হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

 

বন্ধ্যাত্ব বা অনুর্বরতা প্রতিকারের উপায়ঃ

১। স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনায় গাভী পালন করতে হবে।

২। সুষম খাদ্য খাওয়াতে হবে।

৩। সঠিকভাবে গাভীর গরমকাল নির্দ্ধারণ করে সময়মত প্রজননের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

৪। প্রজনন তন্ত্রে কোন অসুখ থাকলে সময়মত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫। প্রসবের সময় সঠিক যত্ন নিতে হবে।

৬। প্রসবের পর কমপক্ষে ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পুনরায় প্রজনন করাতে হবে