গরুর শরীরে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া
কৃষিপ্রধান এদেশের অনেক সাধারণ মানুষই ফসল চাষের পাশাপাশি কিংবা শুধু গবাদিপশু লালন-পালন কে জীবিকা হিসেবে বেছে নেয়। গ্রাম অঞ্চলের বড় বড় মাঠে সকালে গরুকে ঘাস খাওয়ার জন্য রেখে আসা হয় আবার সন্ধ্যায় নিজস্ব গন্তব্যে নিয়ে আসে – এ যেন তাদের নিত্য দিনের রুটিন । কিন্তু সমস্যা টা তখনই হয় যখন গিয়ে দেখে গবাদিপশুর মৃত লাশ মাটিতে পরে আছে । কিন্তু কেন এমনটা হয়? এর মূলে রয়েছে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া। আজকের পর্বে আমরা ” গরুর শরীরে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া “ নিয়ে বিস্তারিত জানবো –
নাইট্রেট ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া কী?
নাইট্রেট ও নাইট্রাইট যুক্ত খাবারে যখন নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি থাকে তখন তা পশুর শরীরে এক ধরণের বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে । এ বিষক্রিয়াকে আমরা নাইট্রেট ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া বলে থাকি।
গরুর শরীরে কীভাবে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া হয়?
এই বিষক্রিয়া টি সাধারণত নাইট্রেট যুক্ত খাবার খেয়ে বেশি হয়ে থাকে । সাধারণত বৃষ্টির পরে গজানো কচি ঘাসের মধ্যে নাইট্রোজেনের পরিমান বেশি থাকে। তখন বৃষ্টির পানিতে মিশ্রিত এসিডের সাথে কচি ঘাসের নাইট্রোজেন রাসায়নিক ভাবে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট বিষক্রিয়া উৎপাদন করে। এবং গরু সবুজ কচি ঘাসের সাথে এ বিষ গ্রহণ করে। অতঃপর গরুর মৃত লাশ মাঠের এক কোণে পরে থাকতে দেখা যায়।
কোন কোন খাবারে নাইট্রেট বিষক্রিয়া বেশি হয়ে থাকে?
শ্যামা, হেলেঞ্চা, বোরা ইত্যাদি নাইট্রেট যুক্ত ঘাস খেয়ে গরুর শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে । এছাড়াও ভূট্টা গেইচা, মূলা, সরিষাতে ৩% এবং নেপিয়ারে ৯.৮% নাইট্রেট থাকে বিধায় গরুকে এসব ঘাস খাওয়ানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত গরুর কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
১। জিহৃবা দিয়ে অনবরত লালাক্ষরণ হয়।
২। ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়।
৩। গরুর শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা যায়।
৪। পেশীর কম্পন এবং শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হয়।
৫। গরুর শরীরে টলমল অবস্থা হয় এবং পরে মাটিতে শুয়ে পড়ে ও খিচুনি হয়৷
এ বিষক্রিয়ার প্রতিকার ও চিকিৎসা কী কী?
✅ ১% এর অধিক নাইট্রেট যুক্ত ঘাস প্রাণিকে খাওয়ানো যাবে না। এতে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে।
✅ কাঁচা ঘাসের সাথে খড় মিশিয়ে পশুকে খাওয়াতে হবে । এতে করে বিষের প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কচি ঘাস একদিকে যেমন গরুর জন্য উপকারী, অন্যদিকে তেমন ঝুঁকিপূর্ণও। তাই ঝুঁকি এড়াতে গরুকে নাইট্রেট এর পরিমাণ বিবেচনায় রেখে ঘাস খাওয়াতে হবে। অনেক সময় বর্ষাকালে এসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে। এসময় গরুকে ভুলেও কচি ঘাস খায়ানো যাবে না। তাতে করে নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় গরুর প্রাণনাশের আশংকা থাকে।