যকৃত কৃমি – গবাদিপশুর নীরব ঘাতক

Published by Khamar-e Agro Research Team on

যকৃত কৃমি বলতে আমরা কী বুঝি?

কৃমি এমন একটি অসুখ যার ফলে প্রাণির পুষ্টিগুণ শুষে নেয় এবং প্রাণি পুষ্টিহীনতায় ভিগে। ফ্যাসিওলা ( Faciola) প্রজাতির পাতা কৃমি দ্বারা সৃষ্ট প্রাণির রোগকে যকৃত/কলিজা কৃমি রোগ বা ফ্যাসিওলাসিস (Facioliasis) বলে। যাকে আমরা যকৃত কৃমি বলে থাকি।

 

প্রচলিত নাম :

যকৃত কৃমিকে কলিজা চাটুয়া, কলিজা পঁচা রোগ ইত্যাদি নামেও আখ্যায়িত করা হয়।

 

যকৃত কৃমি সৃষ্টির কারণ কী? 

বাংলাদেশে ফ্যাসিওলা জাইগানটিকা (Fasciola gigantica ) নামক ব্যাকটেরিয়া বা পাতা কৃমি দ্বারা রোমন্থক প্রাণি বিশেষ করে গরু. মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি প্রাণি আক্রান্ত হয়।

যকৃত কৃমি

যকৃত কৃমি

এ রোগে আক্রান্ত প্রাণির দেহে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায়? 

১/ এ রোগ তেমন ভয়াবহ নয়। কিন্তু তীব্র প্রকৃতির রোগে যকৃত প্রদাহ ও রক্ত ক্ষরণের কারণে উপসর্গ প্রকাশের পূর্বেই প্রাণির হঠাৎ মৃত্যু ঘটে। 

২/ যকৃতে কৃমির উপস্থিতির কারণে রক্তে প্রোটিনের অভাব ঘটে । ফলে বিশেষ করে চোয়ালের নীচে চামড়ায় ও বুকের বেড় (Brisket) এলাকায় জলপূর্ণ স্ফীতি দেখা যায়। এই অবস্থাকে বোটল জ ( Bottle jaw)  বলে।

৩/ কৃমি প্রাণির শরীর থেকে রক্ত ও প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান শুষে নেয়। তাই আক্রান্ত প্রাণির শরীরে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়।

৪/ এ রোগে আক্রান্ত প্রাণির খাবার ঠিক ভাবে হজম হতে চায় না। ফলে বদ হজম ও ডায়রিয়া দেখা দেয়। 

৫/ আক্রান্ত প্রাণির ক্ষুদামন্দা, বিমর্ষতা, দূর্বলতা ও পেটে ব্যথা লেগেই থাকে। পেটে কেমন যেন চিন চিন ব্যথা অনুভূত হয় 

৬/ প্রাণির মল পরীক্ষা করলে কৃমির ডিম পাওয়া যায়।

কৃমিতে আক্রান্ত প্রাণি

কৃমিতে আক্রান্ত প্রাণি

কৃমির বিস্তার রোধে চিকিৎসা:

১/ কোনো প্রাণি কৃমিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

২/ ট্রাইক্লাবেনডাজল বা নাইট্রোক্সিনিল  বা অক্সিক্লোজানাইড বা আ্যলবেনডাজল ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে এ রোগের ভাল ফল পাওয়া যায়।

৩/ চিকিৎসার পর আক্রান্ত প্রাণিকল ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ঔষুধ খাওয়াতে হবে।

 

রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

১/ কৃমির বংশবিস্তার লাভ করে এমন জায়গা সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। যেমন- বসতবাড়ির আশেপাশে শামুকের বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। কারণ শামুক কৃমির মাধ্যমিক পোষক।

২/ বাড়ির আশেপাশে ডোবা, নালা ইত্যাদি নোংরা জায়গায় কৃমির বসবাস হতে পারে। তাই নিচু বা ড্রেনের আশেপাশে গবাদিপশু কে ঘাস খাওয়ানো উচিত না।

৩/ গরুর গোবর থেকেও এক প্রাণি থেকে আরেক প্রাণিতে এ রোগের বিস্তার ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে গরুর গোবর যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

৪/ ছয় মাস পরপর প্রাণিকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। ফিডমাস্টার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন অনুসারে সময়মত পশুকে কৃমির ঔষুধ খাওয়াতে হবে।

 

সর্দি-জ্বরের মতোই কৃমি একটি সাধারণ অসুখ। কিন্তু এরোগে গবাদিপশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আবার অনেক সময় চিকিৎসা করা না হলে প্রাণি মারাও যেতে পারে। তাই এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে হেলাফেলা না করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।