কিটোসিস

Published by Khamar-e Agro Research Team on

মাত্র তিনটি গরু নিয়ে মোবাশ্বের আলী খামার শুরু করে। লালু, নিলু এবং ধলু নামে ডাকে পশুগুলোকে। সাতদিন হতে চলছে ধলু বাচ্চা প্রসব করেছে। কিন্ত দিন কে দিন তার দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এ সমস্যা নিয়ে মোবাশ্বের আলী স্থানীয় পশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে। তিনি পশুটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলেন পশুটি কিটোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। 

 

কিটোসিস কি?

গর্ভবতী গাভীর শর্করা জাতীয় খাদ্যের ক্রটিপূর্ণ বিপাকের কারণে সৃষ্ট রোগকে কিটোসিস বলে । এরোগের মূল কারণ ঠিকভাবে হজম ক্রিয়া সম্পাদন না হওয়া। সাধারণত বাচ্চা প্রসবের কয়েকদিন হতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ দেখা যায়। 

 

কী কী কারণে কিটোসিস হতে পারে? 

✅ প্রাণির রক্তে গ্লুকোজের অভাব দেখা দিলে কিটোসিস হতে পারে। 

✅ অনেক সময় পশুর খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবার ঠিকভাবে সরবরাহ করা হয় না। তখন শর্করা জাতীয় খাদ্যের অভাবে এ রোগ হয়ে থাকে ।

✅ প্রাণির খাদ্য তালিকায় নিম্নমানের খাবার সংযোগ করলে বিপাকীয় শক্তি ক্রমশ হ্রাস পায়। এক্ষেত্রেও প্রাণির শরীরে কিটোসিস রোগ বাসা বাধতে পারে। 

✅ গাভীর উপর অতিরিক্ত ধকল কিংবা গাভীকে পর্যাপ্ত খাবার না দিলেও এই রোগ হতে পারে। 

 

এ রোগের বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ কী কী? 

১. ক্রমশ  দুধ উৎপাদন হ্রাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ।

২. গাভীর খাদ্য গ্রহণে অনিচ্ছা দেখা দেয়। এর ফলে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে ও প্রাণি ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

৩. আক্রান্ত গাভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, দুধ ও বাসস্থানের সর্বত্র এসিটোনের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়। 

৪. সবসময় লালা ঝরতে থাকে, প্রাণিকে অস্বাভাবিকভাবে জাবর কাটতে দেখা যায় ও সব কিছু জিহ্বা দিয়ে চাটা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।

৫. কাঁধ ও মধ্যভাগের মাংস পেশীতে এক ধরণের কাঁপুনি দেখা যায় এবং গাভী ঠিকমতো স্থির হতে পারে না।

 

এ রোগের চিকিৎসা সেবা কী কী?

১. রোগ সনাক্তের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী  গ্লুকোজ বা ডেক্সট্রোজ সলুশন শিরায় ইনজেকশন করলে দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। 

২. তাছাড়া গ্লুকোকর্টিকয়েড হরমোন এ রোগের চিকিৎসায় চমৎকার কাজ করে।

কীভাবে এ রোগ প্রতিরোধ করবো ? 

১. গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর থেকে ২ দিন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

২. বাচ্চা প্রসবকালীন সময়ে গাভী যাতে অনাহারে না থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩.  গাভীকে প্রতিদিন কিছু হাঁটাহাঁটির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে বিপাকীয় শক্তি বৃদ্ধি পায়। 

৪. দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত কোবাল্ট, ফসফরাস ও আয়োডিন থাকা প্রয়োজন। 

কিটোসিস মূলত গর্ভবতী গাভীর হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় খুব বেশি ধকল সহ্য করতে না পারা, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাব এবং বিপাকীয় শক্তি হ্রাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ। গর্ভবতী গাভীর দিকে বিশেষ নজর দেয়া এবং রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রদান করলে এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব।