মিল্ক ফিভার বা Hypocalcemia

Published by Khamar-e Agro Research Team on

নয়নকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। তার খামারের বেশ কিছু গরু নাকি অনেক দিন যাবত তেমন খাওয়া-দাওয়া করে না, ক্রমশই শুকিয়ে যাচ্ছে, ঠিক যেন মাথা তুলে দাঁড়াবার জোর নেই। এর সাথে দেখা দিয়েছে মাথা ও পা কাঁপা ভাব এবং অল্পতেই উত্তেজনা প্রবণ স্বভাব। এভাবে চলতে থাকলে খামারের বাকি গরুগুলোও রোগাক্রান্ত হবে। 

তাই তিনি গ্রামের প্রাণিসম্পদ অফিসারকে বিস্তারিত খুলে বললেন। তিনি নয়নকে যেসব বিষয় বুঝিয়ে বললেন এবং যা সলা-পরামর্শ করলেন তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ 

প্রথমে তিনি যাচাই বাছাই করে এবং গরুর লক্ষণ দেখে বললেন গরু গুলো মিল্ক ফিভার বা হাইপোক্যালসেমিয়া  রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এখন চলুন এ রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক –

 

মিল্ক ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী?

কোন কারণে প্রাণীর রক্তে যদি ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায় তখন এই রোগ হতে পারে। 

 

ক্যালসিয়ামের মাত্রা কতোটুকু থাকতে হবে? 

সাধারণত ১০০ সি সি রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ থাকতে হয় ৯ মিলিগ্রামেরও বেশি। কোনো কোনো বিশেষ কারণে এই মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে পারে, এমনকি তা ৩-৪ মিলিগ্রামে নেমে আসে। আর তখনই এই রোগের সৃষ্টি হয়।

মিল্ক ফিভার বা Hypocalcemia তে আক্রান্ত গরু

মিল্ক ফিভার বা Hypocalcemia তে আক্রান্ত গরু

লক্ষণঃ

ক্ষুধামন্দাঃ গরু কিছু খেতে চায় না, খাবারে অনীহা দেখা দেয়। 

উত্তেজিত ভাবঃ গরু অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে যায় কিন্তু শারীরিক দুর্বলতার কারণে ঠিকভাবে চলাচলই করতে পারে না। 

মাথা ও পা কাঁপাঃ  গরুর মাথা এবং পা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে। দেখেই বোঝা যায় প্রাণীটি শারীরিক ভাবে কতোটা দুর্বল এবং অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায়।  

দাঁড়িয়ে থাকাঃ গরুর মধ্যে একধরনের অস্থিরতা লক্ষ করা যায়। সে সবসময় দাঁড়িয়ে থাকতে পছন্দ করে। বসে থাকা কিংবা চলাচলে এক ধরণের অনীহা দেখা দেয়। 

চলাচলে ব্যাঘাতঃ গরু ঠিকভাবে হাঁটতে পারে না, হাঁটতে গেলে টলতে থাকে, চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। চলাচল করতে গেলে পিছনের পায়ের দুর্বলতার কারণে শুয়ে পড়ে,  পা গুলো ছড়াতে থাকে যা থলথলে ও দুর্বল দেখায়।

 

চিকিৎসাঃ

রোগ- বালাই হলে তার যথোপযুক্ত প্রতিকারও আছে।  এ কারণে রোগের লক্ষণ প্রকাশের সাথে সাথে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নেয়া অনেক জরুরী । তাহলে দ্রুতই এ রোগের সমাধান করা যাবে। গরুর মিল্ক ফিভার বা হাইপোক্যালসেমিয়া তে যেমন চিকিৎসা দেয়া হয় তা বর্ণনা করা হলো –

 

 ১. রোগাক্রান্ত হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব ক্যালসিয়াম বোরো গ্লুকোনেট সলুশন ইনজেকশন দিতে হবে। ৪৫০ কেজি দৈহিক ওজনের গাভীকে ৫০০ মিলি ক্যালসিয়াম বোরো গ্লুকোনেট দিতে হবে ; যার মধ্যে প্রায় ১০৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।  ওষুধ সেবনের ও কিছু নিয়ম আছে। যেমনঃ অর্ধেক মাত্রা ত্বকের নিচে এবং বাকি অর্ধেক শিরায় ৫-১০ মিনিট ধরে দেয়া হয়।

২. এ রোগের মূল কারণ পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের অভাব। তাই সঠিকভাবে সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম রক্তে গেলেই গাভী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। এর জন্য খামারীদের নিয়মিত ও ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক রোগাক্রান্ত গরুকে ক্যালসিয়াম সেবন করতে হবে। 

৩. যদি মাত্রাতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সলুশন দিয়ে গাভীর চিকিৎসা করা হয়, তাহলে গাভীর উপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে করে গাভী সুস্থও হয় না এবং দাঁড়াতেও পারে না। অথবা সাময়িকভাবে পশু সুস্থ হলেও পুনরায় একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অপরদিকে ক্যালসিয়াম সল্যুশন অতিরিক্ত মাত্রায় এবং দ্রুত শিরায় দিলে প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

 

বর্তমানে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম গ্লুকোজ সমন্বয়ে সলুশন বাজারে পাওয়া যায়। দুগ্ধজ্বরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা হ্রাস পায় কিন্তু ম্যাগনেসিয়াম মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই দুগ্ধজ্বরের চিকিৎসার ওষুধ নির্বাচনের জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন। 

 

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণঃ

কিছু বিধিনিষেধ আছে যা নিয়মিত মেনে চললে এ রোগের কবল থেকে গাভীকে রক্ষা করা সহজ হবে। তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো – 

প্রথমত,  গাভীর খাদ্যাভ্যাস সংশোধন করতে হবে। এ সংশোধন হতে পারে এমন-

১. গাভীকে শুষ্ক অবস্থায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করা। তবে শুধু ক্যালসিয়াম দেয়া যাবে না কারণ

দেহকে সম্পূর্ণ পাকান্ত্রের ক্যালসিয়াম শোষণের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। এতে হাড় ক্ষয় কম হয়।

২. খাদ্যে পরিমাণ মতো ফসফরাস সরবরাহ করা,  যা গরুর হাড় কে আরও মজবুত করে তুলবে ।

৩.গাভীর দানাদার খাদ্যে শতকরা ১৫ ভাগ মনো সোডিয়াম ফসফেট মিশিয়ে খাওয়ালে এ রোগ প্রতিহত হয়।

গরুর এমন রোগ-বালাই দেখা দিলে ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। রোগ যেমন আছে তেমনি তা প্রতিকারের যথোপযুক্ত চিকিৎসা এবং প্রতিকার বা নির্মূল ব্যবস্থাও আছে। তাই খামারীদের সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে, গরুর খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের জোগান দিতে হবে এবং খাবার দাবারের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।