বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্যের প্রস্তুতপ্রণালী পদ্ধতিঃ দই এবং ক্রীম

Published by Khamar-e Agro Research Team on

ভোজনরসিক বাঙালীর যে কোনো অনুষ্ঠানে পূর্ণতা আনতে দই এবং ক্রীম অন্যতম সহায়ক। আমরা মূলত এসব দুগ্ধজাত পণ্য বাজার থেকেই সরবরাহ করে থাকি। কিন্তু সচরাচর হাতের কাছে পাওয়া না গেলেও খুব সহজে ঘরোয়া পদ্ধতিতেও আমরা এ দ্রব্য গুলো প্রস্তুত করতে পারি। আবার দুগ্ধজাত পণ্য খামারীদের জন্য বাড়তি আয়ের উৎস। খুব সহজেই এসব পণ্য প্রস্তুত করে খামারীরা বাজারজাত করতে পারে। 

চলুন জেনে নেয়া যাক জনপ্রিয় দু’টি দুগ্ধজাত পন্য দই এবং ক্রীমের ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রস্তুত প্রণালী –

 

 ঘরোয়া পদ্ধতিতে ”দই” প্রস্তুত প্রণালীঃ

যা যা উপকরণ প্রয়োজন এবং এর পরিমাণঃ নিচের ছকে দই প্রস্তুতের জন্য উপকরণ সমূহ এবং তার পরিমাণ উল্লেখ করা হলোঃ

  উপকরণ সমূহ  পরিমাণ 
১. ঘন দুধ 

২. চিনি 

৩. মিষ্টি দই 

৪.পরিষ্কার মাটির পাত্র (দই পাতার জন্য)

১. ২ লিটার 

২. ২ কাপ থেকে একটু কম 

৩. ৩ চা চামচ  

৪. একটি

প্রস্তুত পদ্ধতিঃ উপকরণ সংরক্ষণ করা তো হয়ে গেলো। এবার চলুন জেনে নেই উপকরণগুলো কীভাবে ব্যবহার করে খুব সহজেই দই প্রস্তুত করবো-

  • প্রথমে ভাল করে দুধ ফুটিয়ে ঘন করে নিতে হবে । এরপর দুধ ফোটানোর সময় বার বার নাড়তে হবে যাতে করে সর না পরে এবং নিচে লেগে না যায় ।
  • এরপর একটি বাটিতে ২ চা চামচ চিনির সাথে  ২ চা চামচ পানি মিশ্রিত করতে হবে। তারপর ঘন ঘন জ্বাল দিয়ে ক্যারামেল বানিয়ে নিতে হবে।
  • ক্যারামেল বানানো হয়ে গেলে সেটা দুধের মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। এতে দইয়ের একটা সুন্দর রঙ আসে।
  • এবার বাকি চিনি ঢেলে দিয়ে আরও কিছুটা ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটানো হয়ে গেলে দুধ নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিতে হবে। 
  • ততক্ষণে মাটির পাত্রের গায়ে সামান্য পরিমাণ ( প্রায় ১ চামচ) দই ভালো করে মাখিয়ে রাখতে হবে। 
  • দুধ ঠান্ডা হয়ে গেলে বাকি দই দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। 
  • এরপর মাটির পাত্রে দুধ ঢেলে দিয়ে মুখ ভাল করে আটকে দিতে হবে। যাতে পাত্রের পাশে দিয়ে পড়ে গিয়ে নষ্ট না হয়। 
  • সবশেষে দই জমাট বাধার পালা। মাটির পাত্রটি মোটা কাপড়ে জড়িয়ে ৭-৮ ঘন্টা রেখে দিতে হবে, একটুও নাড়াচাড়া করা যাবে না। 

এভাবেই ৭-৮ ঘন্টা পর তৈরি হয়ে যাবে বহু আকাঙ্খিত ঘরোয়া পদ্ধতিতে দই।

দই

সদ্য প্রস্তুতকৃত দই

ঘরোয়া পদ্ধতিতে “ক্রিম” প্রস্তুত প্রণালীঃ

যা যা উপকরণ প্রয়োজন এবং এর পরিমাণঃ নিচের ছকে ক্রিম প্রস্তুতের জন্য উপকরণ সমূহ এবং তার পরিমাণ উল্লেখ করা হলোঃ

১. একটি ক্রিম সেপারেটর যন্ত্র বা মেশিন 

২. দুধ (পরিমাণ মতো) 

বিঃদ্রঃ দুধের তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসএর মধ্যে থাকতে হবে। 

 

প্রস্তুত পদ্ধতিঃ ক্রিম তৈরী করার পদ্ধতি দই প্রস্তুত পদ্ধতি থেকে তুলনামূলক সহজ ।  চলুন জেনে নেই উপকরণগুলো কীভাবে ব্যবহার করে খুব সহজেই ক্রিম প্রস্তুত করবো-

  • প্রথমে একটা পাত্রে দুধ সংরক্ষণ করে তা ক্রিম সেপারেটর মেশিনে ঢেলে দিতে হবে ।  মেশিনে প্রবেশের পরে , সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সের কারণে মেশিনের ঘূর্ণনের ফলে দুধের ক্রিম এবং স্কিম মিল্ক (ফ্যাট ছাড়া দুধ) আলাদা হয়ে যায় । 
  • এরপর মেশিন থেকে একটা পরিষ্কার পাত্রে ক্রিম সংরক্ষণ করতে হবে। ক্রিম সেপারেটর মেশিনে ক্রিম এবং স্কিম মিল্ক  বের হওয়ার জন্য আলাদা মুখ থাকে। তাই খুব সহজেই পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণত ৭.৫ % ফ্যাটের ১০০ কেজি দুধ থেকে প্রায় ৫০ % ফ্যাটের ১৪ কেজি ক্রিম পাওয়া যায়। 

 

কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ

✅ দুধের তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে ক্রিমে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হবে।

✅ ক্রিম সেপারেটরে আস্তে আস্তে দুধ ঢালতে হবে। 

মেশিন থেকে সংগ্রহকৃত ক্রীম

মেশিন থেকে সংগ্রহকৃত ক্রীম

 

দুধ কিংবা দুগ্ধজাত পণ্য আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করতে অন্যতম সহায়ক। গ্রাম অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী  গরুর দুগ্ধ জোগান দেয়া সম্ভব হলেও শহর অঞ্চলে ঠিকভাবে যোগান দেয়া সম্ভব হয় না। আবার অনেক সময় অনেকে বিশেষ করে শিশুরা দুগ্ধ পান করতে চায় না। এতে করে শরীরে আমিষের ঘাটতি রয়েই যায় এবং শরীরে  বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে। তখন দুগ্ধের জায়গায় এসব সুস্বাদু দুগ্ধজাত পণ্য শরীরে আমিষের চাহিদা পূরণ করে। আবার অনেক সময় দুগ্ধের আধিক্য দেখা দিলে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুতের মাধ্যমে তা সংরক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে বাজারজাত করা যায় ; যা খামারীদের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়তা করে।