বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যা

Published by Khamar-e Agro Research Team on

 

গাভী থেকে বাছুর জন্মের মাধ্যমে গো-সম্প্রদায়ের বিস্তার ঘটে। তাই সুস্থ-সবল বাছুরের জন্মের মাধ্যমে গবাদিপশুর বিস্তার এবং খামারীদের ব্যবসায়িক আয়-উন্নতি অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই বাছুরের সঠিক পরিচর্যা কেমন হওয়া উচিত এ নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা “বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যা”-

এ বিষয়টিকে আমরা কয়েকটি ভাগে উপস্থাপন করতে পারি। যথা-

১.জন্মের প্রাক্কালে যত্ন

২.জন্মের পর বাছুরের যত্ন

৩.বাছুরের অন্যান্য যত্ন

 

আসুন এখন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাকঃ

 

জন্মের প্রাক্কালে যত্নঃ 

১। গাভী প্রসবের প্রাক্কালে গাভীকে অবশ্যই আলাদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শুকনো জায়গায়  রাখতে হবে। কারণ অপরিষ্কার স্যাঁতসেতে জায়গাতে বাছুর প্রসব করলে বাছুরের বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাই দেখা দিতে পারে। 

২। গাভী প্রসব করার পর যদি বাছুরের স্বাভাবিক  লক্ষণ ব্যতীত অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে অনতিবিলম্বে প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ  করা একান্ত কর্তব্য । অন্যথায় পরবর্তীতে বড় বড় ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। 

৩। গাভী প্রসবের প্রাক্কালেই শুকনো খড় বিছিয়ে দিয়ে পাশে পর্যাপ্ত খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ বাছুর জন্মের পরপরই তাকে খড়ের গাদায় রাখতে হবে এবং লালা ঝিল্লি পরিষ্কার করতে হবে। 

 

জন্মের পরপরই বাছুরের যত্নঃ

১। জন্মের পরপরই বাছুরকে শুকনো খড়কুটো বা ছালার উপর রাখতে হবে। কারণ বাছুরের মুখে এবং শরীরে লেগে থাকা লালা ঝিল্লি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। 

২। এরপর খড় বা ছালা দিয়ে বাছুরের  নাক ও মুখ মন্ডল হতে লালা বা ঝিলি− পরিষ্কার করতে হবে। নতুবা শ্বাসরূদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা  থাকে। যদি বাছুরের শ্বাস- প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তবে বুকের পাঁজরের হাড়ে আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ পর পর  কয়েক বার চাপ প্রয়োগ করতে হবে। বাছুরের নাকে, মুখে, নাভীতে ফুঁ দিলেও ভাল ফল পাওয়া যায়।  প্রয়োজনে শ্বাস-প্রশ্বাস বর্ধনকারী ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৩। জন্মের সাথে সাথে বাছুরের নাভীতে কিছু  এন্টিসেপটিক যেমন টিংচার আয়োডিন, ডেটল বা সেভলন লাগাতে হবে। ফলে ধনুষ্টংকার, নাভী ফুলা ইত্যাদি  হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় । 

৪। গাভী যেন তার বাছুরকে চাটতে পারে সে সুযোগ করে দিতে হবে অথবা শুকনা খড়  বা ছেঁড়া কাপড় দিয়ে বাছুরের শরীর ভাল ভাবে মুছে দিতে হবে। এ অবস্থায় বাছুরকে পানি দিয়ে ধৌত করা সমীচীন হবে না। কারণ, পানির সংস্পর্শে আসলে বাছুরের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এবং নানা ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বাছুর উঠে দাঁড়ানো মাত্রই তাকে শালদুধ খাওয়াতে হবে। 

প্রসবের পরে গাভী এবং বাছুর

প্রসবের পরে গাভী এবং বাছুর

বাছুরের অন্যান্য যত্নঃ

১। বাছুরের প্রতি সর্বদাই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সময় মতো খাদ্য ও পানি সরবরাহ দিতে হবে। রোগ প্রতিরোধক টিকা দিতে হবে। এতে করে বাছুরের রোগবালাই কম হবে এবং সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে উঠবে। 

২। বৃহৎ খামারে প্রতিটি বাছুরকে আলাদা করে চেনার জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাগ নম্বর দিতে হবে। নতুবা গাভীর দুধ খাওয়ানোতে ভুল হতে পারে। 

৩।বাছুর বড় হওয়ার সাথে সাথে শিং কেটে ফেলাই ভাল। তা না হলে একে অন্যকে গুঁতো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের  দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে। 

খামার গঠনে একটি ভালো ফলাফল পেতে বাছুরের সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার কোনো বিকল্প নেই। খামারীদের অবশ্যই অনেক গুরুত্বের সাথে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

বাছুর