গরু মোটাতাজাকরণের ফার্ম কেমন হওয়া উচিত
গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসার অন্যতম মূল লক্ষ্য অল্প পুঁজিতে গরু কিনে তাকে মোটাতাজা করে অধিক মূল্যে বিক্রি করা। তাই এ ধরণের ব্যবসায় লাভবান হতে গেলে বেশ কিছু ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয়। যেমন-
- খামারে বিনিয়োগ এর পরিমাণ কেমন হওয়া উচিত
- কতগুলো গরু নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে
- ব্যাচ ভিত্তিক গরু মোটাতাজাকরণের পরিকল্পনা
- ভালো জাতের গরু বাছাই করা
- সঠিকভাবে গরুর বাজারজাতকরণ করা
- গরু বিক্রয়ের হাট সম্পর্কে ধারণা রাখা
গরু মোটাতাজাকরণ ব্যাবসায় কি কি বিষয় বিবেচনায় রাখলে লাভবান হওয়া যায় চলুন সে ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক –
১) খামারে বিনিয়োগ এর পরিমাণঃ
খামারে বিনিয়োগ এর পরিমাণ কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে খামারীদের ধারণা রাখা আবশ্যক। কারণ আপনি কতোটুকু বিনিয়োগ করলে গরু লালন-পালন করতে পারবেন এবং বিক্রয়ের মাধ্যমে লাভবান হতে পারবেন তা অনেকটাই নির্ভর করে বিনিয়োগ এর উপর। যেমন- বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে গরুর সংখ্যা, খামারের বাসস্থান ব্যবস্থা, গরুর খাবার, চিকিৎসা সেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা নির্ধারিত হবে। তাই খামার গঠন পরিকল্পনার শুরুতেই বিনিয়োগ এর পরিমাণ বিবেচনায় রাখতে হবে।
২) কতগুলো গরু নিয়ে খামার শুরু হবেঃ
একটা মোটাতাজাকরণ খামার গঠনের শুরুতেই গরুর সংখ্যা নির্ধারণ করা আবশ্যক। কারণ গরুর সংখ্যা এর উপর নির্ভর করে খামার ব্যবস্থাপনা, বাসস্থান ব্যবস্থা, খাদ্য এর পরিমাণ নির্ণয়, জনবল নিয়োগ প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নির্ভর করে। তাই গরুর সংখ্যা জানা থাকলে খামারের কাঠামো গঠন করা সহজ হয়।
৩) ব্যাচ ভিত্তিক মোটাতাজাকরণ এর পরিকল্পনাঃ
ব্যাচ ভিত্তিক গরু মোটাতাজাকরণ বলতে একেকটি ব্যাচে কয়টি গরু থাকবে তার পরিকল্পনা করা বুঝায়। ব্যাচ ভিত্তিক পরিকল্পনা করলে গরু লালন-পালন করা সহজ হয়। পরিকল্পনায় বছরে কয়টি ব্যাচ থাকবে, ব্যাচের ডিউরেশন কতদিনের, ব্যাচে টার্গেট ওজন কতটুকু এসব দিকগুলো লক্ষ্য রাখা হয়।
৪) গরুর জাত নির্ধারণঃ একেক জাতের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি, খাবারের চাহিদা, জীবিকা নির্বাহের ধরণ একেক রকমের। তাই একটি নির্দিষ্ট জাতের গরু কে বাছাই করা হলে তা লালান-পালন করা সহজ হয় এবং খামারে গরুর সমতা বিরাজ করে। তাদের বেড়ে ওঠা, বিভিন্ন চাহিদা পূরণে খামারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয় না।
৫) গরুর বাজারজাতকরণঃ গরু মেটাতাজাকরণ ব্যবসার লাভ লোকসান নির্ভর করে গরুটা ক্রয়ের পর কতোটা বেশি দামে বিক্রি করতে পারছে তার উপর। একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে বড় হওয়ার পর গরুকে বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশে গরুর বাজারজাতকরণের দুইটি পথ দেখা যায়।
ক) কোরবানীর হাটে
খ) স্থানীয় হাটে
কোরবানীর হাট বলতে মূলতঃ ঈদ-উল-আজহার সময় কোরবানীর পশু ক্রয় বিক্রয়ের যে বিশেষ হাট বসে তাকে বোঝানো হয়েছে। কোরবানীর সময় গরু ছাগলের বিরাট হাট বসে এবং বছরে একবার এ হাট কিছু নির্দিষ্ট দিনের জন্য হয়ে থাকে। আর স্থানীয় হাট বলতে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে যে হাটটি সারাবছর বসে তাকে বোঝানো হয়েছে। এখানে খামারীরা যখন ইচ্ছা সেই নির্দিষ্ট দিনে পশু বিক্রি করতে পারে।
৬) গরু বিক্রয়ের হাটঃ সাধারণত হাট-বাজার থাকলেই মোটাতাজা গরু বিক্রয়ের হাট আছে এমন বুঝায় না। এলাকায় কতটি স্থানে কতটি গরু প্রতিদিন/প্রতি সপ্তাহে জবাই করা করা হয় তা একটি জরীপের মাধ্যমে খামারীদের জানতে হবে এবং ক্রেতারা কি পরিমাণ গরুর মাংস খায়, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কত দরে গরুর মাংস বিক্রয় হয় তাও জানতে হবে। গরুটি বিক্রয়ের জন্য হাটে যেতে হবে নাকি কসাই এসে নিয়ে যাবে সে সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে।
গরু মোটাতাজা করণ ব্যবসার বিভিন্ন রকমভেদ আছে। সব ব্যবসায়ীদের ধরন এবং বাজারজাত করণের প্রক্রিয়া এক নয়। কোন বিষয়টিকে মূখ্য রেখে গরু মোটাতাজা করণ করবো সেটা শুরুতেই বিবেচনায় রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী বাজারজাত করতে হবে।