দুধেল গাভীর খাদ্য ব্যাবস্থাপনা

Published by Khamar-e Agro Research Team on

খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আমরা সকলেই জানি। মানুষ কিংবা প্রাণী – স্রষ্টার সকল সৃষ্টিই খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। তার মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা আবার জন্মের পরপরই মায়ের দুগ্ধ পান করে জীবনযাপন করে। যেমন গাভীর দুগ্ধ পান করেই বাছুর লালিতপালিত হয়। এমনকি মানুষ্য জাতিও গরুর দুধ এর মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাই অধিক উৎপাদন দিতে এবং গাভী যাতে দুর্বল হয়ে না পরে সে কারণে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাই এসময় গাভীর দৈনন্দিন খাদ্য প্রস্তুত করার সময় নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে খাদ্য তৈরী করতে হবে:

১। গাভীর জন্য সুষম খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। অর্থাৎ খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে; যাতে করে গাভী নিয়মিত এবং অধিক পরিমাণে দুধ দিতে পারে এবং শারীরিক ভাবে দুর্বল না হয়। 

২। খাদ্য অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভজনক হতে হবে। অর্থাৎ সহজ প্রাপ্য এবং দাম কম এরূপ উপকরণ দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত করতে হবে যাতে খামারীদের অর্থ এর অপচয় কম হয় ।

৩। বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে খাদ্য তৈরী করা উচিত যাতে খাদ্য সুস্বাদু ও সহজপ্রাচ্য হয়। এতে করে খাবার মুখরোচক হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিমান ও বহুগুণে বেড়ে যায় এবং গরুর খাবারে রুচি বেড়ে যায়। 

৪। গাভীর পরিপাকতন্ত্রের ধারণ ক্ষমতা অনেক, তাই প্রাণির পেট না ভরা পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। একটি দেশী গাভীর চেয়ে উন্নত একটি গাভী অনেক বড় হয়। দুধও বেশী দেয় এবং সেজন্য তার খাদ্যের চাহিদাও তুলনামূলক বেশী। তাই খাদ্য প্রদানের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে প্রাণির পেট ভরে এবং পুষ্টির অভাবও পুরণ হয়। প্রাণি পেট ভরে না খেতে পারলে অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে। সেদিকে নজর রাখতে হবে। 

৫। গাভীর খাদ্যদ্রব্য টাটকা এবং পরিস্কার হতে হবে। প্রাণির খাদ্য ভিজা স্যাঁতস্যাঁতে হলে ছত্রাক জন্মাতে পারে। এতে বিষক্রিয়া হয়ে গাভীর ক্ষতি করতে পারে। ময়লা, কাঁকড়, পাথর, বালু, মাটি, ছাতাপড়া দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য প্রাণিকে খেতে দেওয়া উচিত নয়। এতে করে গাভী অসুস্থ হতে পারে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। 

৬। গাভীর জন্য কাঁচা ঘাস অত্যাবশ্যকীয়। কাঁচা ঘাসে প্রচুর খনিজ উপাদান ও ভিটামিন থাকে যা সহজে হজম হয়। তাই গাভীকে দৈনিক প্রয়োজনীয় কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। গাভীর দেহ গঠনে, দুধ উৎপাদনে, গর্ভধারণে, বাচ্চা উৎপাদনেও দু’টি উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ ও খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে হবে। দানাদার খাদ্যের সাথে নিয়মিত ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে এগুলোর অভাব হবে না।

৭। প্রাণির দানাদার খাদ্য অবশ্যই সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। দানাদার খাদ্য উপাদানগুলো মিশানোর পূর্বে ভেঙ্গে নিতে হবে। তাতে ভালভাবে মেশানো যাবে এবং সহজে হজম হবে।

৮। আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য যেমন- খড়, কাঁচা ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি আস্ত না দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে প্রাণিকে খাওয়াতে হবে। এতে খাদ্য দ্রব্যের অপচয় হবে না। প্রাণির খেতে সুবিধা হবে এবং হজমেও সহায়ক হবে। খড় কুচিকুচি করে কেটে পানি বা ফেনে ভিজিয়ে অন্যান্য দানাদার মিশ্রণ ও চিটাগুড় মিশিয়ে দিলে গাভী খেতে অধিক পছন্দ করবে এবং সহজ প্রাচ্যও হবে।

৯। খাদ্য উপকরণ হঠাৎ করে পরিবর্তন করা উচিত নয়। খাদ্য উপকরণের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে আস্তে আস্তে দিনে দিনে করতে হবে। অন্যথায় গাভী হঠাৎ নতুন অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না এবং কম কম খাবার গ্রহণের ফলে দুর্বল হয়ে পরবে; যা খামারীদের ব্যবসার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। 

মানুষ কিংবা প্রাণী সবাই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। একটা প্রাণি কেমন উৎপাদন করবে তা নির্ভর করে সে শারীরিক ভাবে কতোটা সুস্থ তার উপর। কিন্তু অনেকসময় প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগানের অভাবে গাভী দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠিকঠাক দুগ্ধ উৎপাদন করতে পারে না এবং প্রজনন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। তাই খামারীদের দুধেল গাভীর পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। 

 

Categories: DairyFattening