গাভীর খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ
বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। আবার সুষ্ঠভাবে শারীরিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান বিভিন্ন মাত্রায় প্রয়োজন। খামারীরা অনেক সময় ব্যবসার শুরুতে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না গাভীর খাদ্য তালিকায় কোন উপাদান কতটুকু পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। গাভীর খাদ্য ব্যবস্থায় কোন কোন উপাদান কতটুকু পরিমাণে দেব তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
গাভীর খাদ্যতালিকায় কি কি উপাদান থাকা উচিত?
১. আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য
২. দানাদার জাতীয় খাদ্য
৩. খনিজ
৪. পানি
কোন কোন খাদ্য উপাদান কতটুকু পরিমাণে থাকা উচিত?
আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্যঃ আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য গাভীর সুস্থ স্বাভাবিক দৈহিক গঠনে অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য গাভীকে দৈনিক ২ কেজি খড় বা ’হে’ অথবা দৈনিক ৬ কেজি সবুজ ঘাস সরবরাহ করতে হবে। অর্থাৎ গাভীকে দৈনিক মোট ওজনের ২% আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য দিতে হবে। কিন্তু ছোবড়া জাতীয় খাদ্যের মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমনঃ আঁশ জাতীয় খাবারের মধ্যে সবুজ ঘাস গাভীর জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। তাই যদি খড় ও সবুজ ঘাস উভয়ই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে তখন প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ কেজি খড় ও ৩ কেজি সবুজ ঘাস সরবরাহ করতে হবে।
দানাদার জাতীয় খাদ্যঃ দানাদার খাবার গাভীর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মোটাতাজা দেহ, দুগ্ধ উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দানাদার খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। যদি দুগ্ধ উৎপাদনের সাথে তুলনা করতে যাই তাহলে প্রথম ৫ লিটার দুধের জন্য ৩ কেজি দানাদার এবং পরবর্তী ৩ লিটারের জন্য ১ কেজি করে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
খনিজঃ গাভীর হারের গঠনে খনিজ পদার্থের বিকল্প নেই। হাঁড়ের গুড়া গাভীর জন্য বরাদ্দ মোট দানাদার খাদ্যের ১% হারে এবং খাদ্য লবণ দানাদার খাদ্যের ১% সরবরাহ করতে হবে।
পানিঃ বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। তাই গাভীকে সুস্থ সবল রাখতে নিয়মিত পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। গাভী দুধেল অবস্থায় পানি পান করার অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। একটি দুধেল গাভীকে দৈনিক ৩৫-৪০ লিটার পানি সরবরাহ করতে হবে।
গাভীর খাদ্যঃ কখন খাওয়াবো এবং কিভাবে খাওয়াবো
উপরের সবগুলো উপাদান; যেমনঃ কাঁচা সবুজ ঘাস, দানাদার খাদ্য মিশ্রণ, আয়োডিন লবন, ইউরিয়া মিশ্রিত খড় একসাথে (পানি বাদে) ভালো করে ভালোমত মেশাতে হবে। পানি গাভী খাদ্য গ্রহণের পর পান করবে। এতে হজমক্রিয়া ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। একেই বলা হয় Total Mixed Ration বা TMR। এই TMR কে তারপর দুই ভাগ করে ( সকালে এবং বিকালে) খাওয়াতে হবে।
দানাদার খাদ্যের মিশ্রণঃ
একটি সুষ্ঠ খাদ্য তালিকায় দানাদার খাদ্য বা কনসেন্ট্রেট এর সুষম মিশ্রণ দরকার । নিচে এই মিশ্রণটি উল্লেখ করা হলোঃ
উপরের মিশ্রণটিতে যে উপাদানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ( গমের ভুষি, চালের কুঁড়া – ১ কেজি) সেটিকে নিচে রাখতে হবে। ক্রমান্বয়ে বাকি উপাদানগুলো ( খেঁসারি ভাঙা, তিল বা বাদামের খৈল , ভিটামিন মিনারেল, লবন) একের পর এক রেখে ভালোমত মেশাতে হবে।
কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
১) বাজারে বিটলবণ এর ব্লক পাওয়া যায়। গাভীর সামনে এইরকম ব্লক থাকলে সেটি নিজের ইচ্ছেমত চেটে খেতে পারবে, এটি গাভীর স্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিটলবণ এর ব্লক সরবরাহ করে গাভীর সামনে মজুদ রাখতে হবে।
২) আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য যেমনঃ খড়, কাঁচা ঘাস, লতা–পাতা ইত্যাদি আস্ত না দিয়ে ছোট ছোট করে কেঁটে গাভীকে খাওয়াতে হবে। এতে খাদ্য দ্রব্যের অপচয় হবে না, গাভীর খেতে সুবিধা হবে এবং হজমেও সহায়ক হবে।
৩) খড় কুচি কুচি করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে অন্যান্য দানাদার মিশ্রণ ও চিটাগুড় মিশিয়ে দিলে গাভী খেতে অধিক পছন্দ করবে এবং সহজ পাচ্য হবে।
কিছু নিষেধাজ্ঞা ❌
১. TMR এবং পানি একসাথে মিশিয়ে মাঝেমধ্যে গাভীকে খেতে দেয়া হয় । তাই TMR এর সাথে কোনভাবেই পানি মিশিয়ে গাভীকে খেতে দেয়া যাবে না। এতে গাভীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. অনেক সময় গাভীকে ভাত / জাউ /চালের খুদ খেতে দেয়া হয় । এসবের জন্য গাভীর ফুড পয়জনিং হতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
সর্বোপরি গাভীর খাদ্য তালিকায় কী উপাদান দেয়া উচিত, কি উচিত না এবং কতোটা দেয়া উচিত সে সম্পর্কে খামারীদের বিস্তারিত ধারণা রাখা উচিত। আশাকরছি উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা খামারীরা লাভবান হবেন।