পশুর সুষ্ঠ বিকাশে হাউজিং ব্যবস্থাপনা

Published by Khamar-e Agro Research Team on

ছেলেমেয়েরা বড় হওয়ায় দিনে দিনে সংসারের খরচ বাড়ছে মজনু মিজ্ঞার। সংসারের এ টানাপোড়েনের মধ্যে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরুর খামার শুরু করেন তিনি। আশা ছিলো ব্যবসায় লাভবান হয়ে ঋণশোধের পাশাপাশি ছোটো এ ব্যবসাটাকে আরও বড় করে তুলবেন। কিন্তু কোথায় কি। গরু লালন-পালন করাই দায় হয়ে গেছে তার। পর্যাপ্ত বাসস্থানের অভাবে পশুগুলোর শারীরিক বৃদ্ধি এবং সুস্থতায় ব্যাঘাত ঘটছে। কোনো কূল কিনারা পাচ্ছেন না যে কীভাবে পশুগুলোর বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে তার সুষ্ঠ বিকাশ সম্ভব হবে। 

আরেকদিকে রজত আলীও কিছুদিন আগে পাঁচলাখ টাকায় গরুর খামার শুরু করেন। রীতিমতো ব্যবসায় লাভবান হয়ে ছোটো ব্যবসাটাকে ধীরে ধীরে বড় করে তুলছেন। সংসারের আয়উন্নতিও আগের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে। তাই মজনু মিজ্ঞা তার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছেন, কীভাবে পশুগুলো লালন-পালন করলে লাভবান হতে পারবেন। রজত আলী তার পরিচর্যার কথা শুনে শুরুতেই গরুর জন্য সুষ্ঠ বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে বলেন। 

গরুর সার্বিক বিকাশে সুষ্ঠ বাসস্থানের কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য প্রয়োজন কিছু পরিকল্পনা মাফিক ব্যবস্থাপনার।  গরুর সার্বিক বিকাশের কথা বিবেচনা করেই আমাদের আজকের আলোচনা  ” পশুর সুষ্ঠ বিকাশে হাউজিং ব্যবস্থাপনা ”

হাউজিং হচ্ছে ডেইরি ফার্মিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি ভাল হাউজিং ব্যবস্থাপনা সর্বোচ্চ উৎপাদনের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে । গবাদিপশুর আবাসন মূলত নির্ভর করে:

১. প্রাণীর সংখ্যা : একটি বাসস্থানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ নির্ভর করে কক্ষে কতোটা প্রাণী বাস করবে তার উপর। অন্যথায় একসাথে গাদাগাদি করে অনেক পশু লালন-পালন করলে পশুদের শারীরিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত এবং নিজেদের মধ্যে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

২. প্রাণীর জাত : একটি প্রাণীর আকার-আকৃতি তার প্রজাতির উপর নির্ভর করে। তাই বাসস্থান তৈরীর আগে প্রাণীর জাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে যাতে পশুগুলো ঠিকঠাক ভাবে চলাচল করতে পারে। 

৩. স্থানীয় পরিবেশগত অবস্থা : বাসস্থান তৈরির পূর্বে স্থানীয় পরিবেশ বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন- আশেপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সেখানকার মানুষের চাহিদার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। 

৪. অর্থনৈতিক অবস্থা : খামারির সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় অপরিকল্পিত ভাবে শুরুতেই সব পুঁজি শেষ করে ফেললে পরে সুষ্ঠ ভাবে লালন-পালন সম্ভব হবে না। 

৫. কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান : খামারির নিজস্ব  এলাকায় কি কি সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান, যেমন- পানি, যোগাযোগ, চিকিৎসা, বাজার সে সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে। 

চিত্রঃ পশুর সুষ্ঠু বিকাশে হাউজিং ব্যবস্থাপনা

চিত্রঃ পশুর সুষ্ঠ বিকাশে হাউজিং ব্যবস্থাপনা

এছাড়াও সুষ্ঠ আবাসনের জন্য যেসব তথ্য বিবেচনায় রাখতে হবে তা হলো : 

  • বাসস্থান কম ব্যয়বহুল হওয়া উচিত। 
  • ভালভাবে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। 
  • পশুকে Extreme weather থেকে রক্ষা করা খামারির আবশ্যিক দায়িত্ব। 
  • সর্বোচ্চ সূর্য এক্সপোজার থাকা উচিত।  সূর্যের আলো সবসময় যাতে প্রবেশ করতে পারে তেমন ব্যবস্থা করা।
  • ঘরের দৈর্ঘ্যের অক্ষ পূর্ব থেকে পশ্চিমে হওয়া উচিত।
  • ঘর যতোটা সম্ভব শুষ্ক থাকা উচিত।
  • পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখতে হবে।  পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা রাখতে হবে। 
  • ২৪ ঘন্টা সহজেই খাদ্য এবং পানি পাওয়া যাবে এমন জায়গা বেছে নিতে হবে। 
  • প্রাণীদের তাপ হ্রাস এবং গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কমাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা উচিত।
  • এমনভাবে অবকাঠামো তৈরী করা উচিত যে প্রয়োজনে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হতে পারে। 

গবাদিপশুর জন্য সুষ্ঠ আবাসন তৈরীতে খামারিদের মূলত পাঁচ ধরনের স্বাধীনতা বিবেচনায় রাখতে হবে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

১. ক্ষুধা ও তৃষ্ণা থেকে মুক্তি

২. অস্বস্তি থেকে মুক্তি

৩. ব্যথা, আঘাত এবং রোগ থেকে মুক্তি

৪. স্বাভাবিক আচরণ প্রকাশের স্বাধীনতা

৫. ভয় ও বেদনা থেকে মুক্তি

অতঃপর মজনু মিজ্ঞাও রজত আলীর মতো গরুর সুষ্ঠ বাসস্থানের জন্য সঠিকভাবে নির্দেশনা মোতাবেক বাসস্থান তৈরীর প্রতি যত্নবান হয়ে উঠেন এবং তার গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে অনেক অল্পসময়ে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন।  তাই গবাদিপশু পালনের সময় যত্নবান হতে হবে। অন্যথায় অলাভজনক ব্যবসার ফলাফল বয়ে বেরোতে হবে; যা কখনোই আমাদের কাম্য নয় |

Categories: DairyFattening