সহজ উপায়ে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যকর বাসস্থান ব্যবস্থাপনা
কথায় আছে – ” স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল “। আর এই সুসাস্থ্যের অনেকটা নির্ভর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর। তাই গবাদিপশুর বাসস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে খামারীদের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত অনেক খামারীই হয়তো এ ব্যাপারে অপারগ। তাই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু “সহজ উপায়ে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যকর বাসস্থান ব্যবস্থাপনা “-
আজকে আমরা মূলত যে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করবো তা হলো –
- সহজ উপায়ে গোয়ালঘর পরিষ্কার
- গো-খামার কীভাবে জীবাণুমুক্ত করবেন?
- পরিষ্কার করণে কিছু টুকিটাকি তথ্য
নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
সহজ উপায়ে গোয়ালঘর পরিষ্কারঃ
১) পশুর ঘর পরিষ্কার করার সহজ ও দ্রুত পদ্ধতিটি হল ট্যাপের পানির ব্যবহার। গরুর গোবর এবং পশুর বিছানা হিসেবে ব্যবহৃত খড় গুলো পরিষ্কার করার জন্য একটা নালার ব্যবস্থা করে দিলে তরল বর্জ্য এবং মূত্র খুব সহজেই সম্পূর্ণ ভাবে ট্যাপের পানি দ্বারা অপসারণ করা যায় ।
২) গরুর খাওন-দাওনের (Feeding pen) স্থানে প্রতিদিনের উচ্ছিষ্ট খাবার অপসারণ করলে মাছির উপদ্রব হ্রাস পাবে। এতে করে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে গবাদিপশু রক্ষা পাবে।
৩) পর্যায়ক্রমিকভাবে পানি পরিষ্কারের মাধ্যমে শৈবাল, জীবাণু এবং ভাইরাস দূর হয়। এতে করে প্রাণী সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে।
গো-খামার কীভাবে জীবাণুমুক্ত করবেন?
১) পশুর মধ্যে রোগ সৃষ্টিতে সক্ষম এমন সমস্ত অণুজীবকে নির্মূল করার জন্য দুগ্ধ খামার বাড়িগুলিকে জীবাণু মুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
২) পশুর শেডে অণুজীব এর উপস্থিতি দুধকে দূষিত করে; যার ফলে দুধের নিজস্বতা নষ্ট হয়। অপরিষ্কার পরিবেশে উৎপাদিত দুধগুলি এমন রোগের সংক্রমণ করতে পারে যা মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
৩) শুকনো মেঝে ঘরগুলিকে শুষ্ক রাখে এবং পশু পায়ে আঘাত পায় না । তাই গোয়ালঘরের মেঝে যতোটা সম্ভব শুষ্ক রাখতে হবে।
৪) একইভাবে, দুগ্ধ খামার এলাকায় মাছি এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের উপস্থিতি কেবল প্রাণীকেই বিরক্ত করে না, এসব পোকামাকড়ের ডিম থেকে মারাত্মক রোগও ছড়ায়। যেমনঃ Babesiosis, Theileriosis। তাই যথাসম্ভব এসব পোকামাকড় এবং ডিম বিনষ্ট করতে হবে এবং যাতে জন্ম না নেয় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৫) ফার্মের প্রধান গেটে কিছু ভালো জীবাণুনাশক ভর্তি একটি হুইল ডিপ থাকলে ভালো হয়; যাতে খামারে প্রবেশের সময় যানবাহনটি ডুব দিয়ে যেতে পারে এবং টায়ারগুলি জীবাণুমুক্ত হতে পারে। বিকল্পটি ব্যবস্থাটি হচ্ছে জীবাণুনাশক সহ গাড়ির নীচের দিকে স্প্রে করা।
৬) টিক প্রুফ বিল্ডিংয়ে গবাদি পশুগুলোকে রাখা উচিত। ফাটল টিকসের বড় উৎস। এই জন্য প্রাচীর এবং ছাদ কালাপাতি ( waterproof ) করা উচিত। ধোঁয়ায় টিকস মারা যায় । এজন্য গোবর ও অন্যান্য বর্জ্যকে ধীরে ধীরে পোড়াতে হবে।
পরিষ্কার করণে কিছু টুকিটাকি তথ্যঃ
– একটি বেলচা এবং ঝুড়ি (লোহা) এর সাহায্যে মেঝে এবং প্রস্রাবের চ্যানেল থেকে wheel barrow দিয়ে গোবর অপসারণ করা সহজ।
-ব্যবহৃত বিছানাপত্র এবং বামফুটগুলিও একইভাবে খাওন-দাওনের (feeding pen) জায়গা থেকে সরালে পরিষ্কার করা সহজ হয়।
-পানি খাওয়ানোর পাত্র নিয়মিত খালি করা & নতুন পানি সরবরাহের সুব্যবস্থা করতে হবে এবং মেঝে ব্রাশের সাহায্যে এর চারপাশ এবং নীচে স্ক্র্যাপ করতে হবে ।
-পশুর পানি খাওয়ার গামলা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে এবং সপ্তাহে একবার চুন মিশ্রণের সাহায্যে ধুয়ে ফেলতে হবে।
-একটি ব্রাশ এবং ঝাড়ু দিয়ে মেঝে স্ক্র্যাপ করা এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে পরিষ্কার থাকে।
-পাশের দেয়াল, রেলিং এবং স্টল গুলোতে গোবরের ছিটা পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করাটা অনেক জরুরী ।
– নিম্নলিখিত ঘনত্বের মধ্যে জীবাণুনাশক সামগ্রী গুলোর যেকোনো একটি ছিটিয়ে দিলে ভালো ফলাফল দেয় । যেমনঃ ব্লিচিং পাউডারে ৩০% এর বেশি ক্লোরিন থাকা উচিত ; ফেনল ১-২% দ্রবণ ; ওয়াশিং সোডা (৪% solution)।
-শেডের মধ্যে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো প্রবেশের সুব্যবস্থা করতে হবে ।
– নিয়মিত বিরতিতে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে; বিশেষত বর্ষাকালে (ফ্লাই সিজন)।
-ফাটলে বসবাসকারী কীটস এবং মাইটগুলি দূর করার জন্য পর্যায়ক্রমে এতে কীটনাশক মিশিয়ে দেয়ালগুলিকে ধবধবে করতে হবে ।
একটি স্বাস্থ্যসম্মত পশুর বেড়ে ওঠায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাসস্থানের কোনো বিকল্প নেই। তাই এ বিষয়টি খামারীদের বিশেষ আওতায় আনতে হবে এবং সর্বোপরি গবাদিপশুর জন্য মঙ্গলজনক আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।