কোন ধরনের গরু বাংলাদেশে বেশি উপযোগী
কোন ধরনের গরু নিয়ে ফার্ম শুরু করবো / আপনার খামারের জন্য কোন ধরনের গরু বেশি উপযোগী
আমের মৌসুমে আমসত্ত্ব খাই না বা পছন্দ করি না এমন মানুষের সংখ্যা অতি নগন্য। কিন্তু আমের বদলে যদি কাঁঠালের আমসত্ত্ব তৈরী করতে বলা হয় তবে কি করবেন? তখন আপনার কাছে মনে হবে এ যেন অসম্ভব বস্তু।
ঠিক তেমনি গরুর যে জাত ডেনমার্ক কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় অনেক দুগ্ধ উৎপাদন করে তা বাংলাদেশে এসেও তেমন ফলন দেবে এমনটা চিন্তা করা অনেকটা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতোই। ব্যবসায় লাভবান হতে গেলে কোন জাতের গরু কতোটা দুধ দেয় তা ভাবার আগে খামারীরা যদি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য উপযোগী এমন পশু লালন-পালন করে তবেই তা বুদ্ধিমানের কাজ এবং যুগোপযোগী। আসুন এসম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই কোন ধরনের গরু আমাদের আবহাওয়ায় বেশি উপযোগী এ সম্পর্কেঃ
- বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ দু’টি রাষ্ট্র হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাদের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে যে কোনো প্রাণীর মানিয়ে নেয়াটা অনেক সহজ ও সাবলীল। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, পাকিস্তানী এবং ভারতীয় জাতের গরু খুব সহজেই বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারে।
- বিদেশী গরুর পাশাপাশি শাহীওয়াল, সিন্ধি, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান এবং সংকর জাতের গরু এদেশের অনেক খামারে জায়গা করে নিয়েছে। অধিক দুগ্ধ উৎপাদন এবং লালন-পালনের সুবিধার জন্য লোকসমাজে দিনে দিনে এসব গরুর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
- বাংলাদেশের শাহজাতপুর, পাবনা, মুন্সি, মাদারিপুর এবং চট্টগ্রাম এলাকায় বেশ উন্নতমানের গবাদিপশু রয়েছে যারা অধিক পরিমাণে দুগ্ধ উৎপাদন করে। তাই এ সমস্ত এলাকায় প্রচুর পরিমাণে দুধ পাওয়া যায়। এসব গবাদিপশু অন্যসব প্রজাতি অপেক্ষা উন্নততর তাই অধিক ফলন দিয়ে থাকে ।
- বর্তমানে এদেশের খামারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সংকর জাতের গরু। এদেশের আবহাওয়ার সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে পারা এবং অধিক উৎপাদন ক্ষমতার জন্য দিনে দিনে জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। দেশি গাভী এবং বিদেশী উন্নত জাতের ষাঁড়ের প্রজননের মাধ্যমেই জনপ্রিয় এই সংকর জাতের গাভীর উৎপত্তি।
- অধিক উৎপাদন ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য আমাদের দেশে দু’ধরনের সংকর জাতের গরু উৎপাদন করা হয়ে থাকে, যেমন-ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের সাথে শাহীওয়াল বকনা বা গাভীর মিশ্রণে এবং ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের সাথে দেশী বকনা বা গাভীর মিশ্রণে।
- সংকর গাভীর গড় ওজন ৩০০-৪৫০ কেজি, প্রতিদিন দুধ দেয় ১২-১৮ কেজি।
এতো গেলো কোন অঞ্চলে কোন গরুর কার্যক্ষমতা কেমন তার বিস্তারিত আলোচনা। আসুন এখন জেনে নেয়া যাক একটি দুধেল গাভীর বৈশিষ্ট্য ; অর্থাৎ আপনি কিভাবে বুঝবেন গাভীটি বেশি দুধ দেবে নাকি কম দুধ দেবে সে সম্পর্কেঃ
মাথার আকৃতি কেমন হবে?
দুধেল গাভী মানেই যে তার মাথা বড় আাকারের হবে এমনটা ভাবা একেবারেই বোকামো। দুধেল গাভীর মাথা সাধারণত হালকা ও ছোট আকারের হয়। পাশাপাশি কপাল প্রশস্ত ও চোখ উজ্জ্বল হবে।
দৈহিক আকৃতি দানবাকার হলেই কি বেশি দুধ দেবে?
দৈহিক আকৃতি দানবাকার হলেই যে গাভীটি বেশি দুধ দেবে এমনটা ভাবা বোকামী। দুধেল গাভীর দৈহিক আকৃতি পাতলা এবং পুরুর সংমিশ্রণ হবে। যেমন- দেহের সামনের দিক সাধারণত হালকা, পিছনের দিক ভারী ও সুসংগঠিত হবে। গাভীর সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুগঠিত হবে। দৈহিক আকার আকর্ষণীয় ও শরীরের গঠন ঢিলা হবে।
পাঁজর: পাঁজরের হাড় স্পষ্ট অনুভব করা যাবে ও হাড়ের গঠন ঢিলা হবে।
চামড়া পুরু হবে নাকি পাতলা?
দুধেল গাভীর চামড়া সাধারণত পাতলা হবে। চামড়ার নিচে অহেতুক চর্বি জমা থাকবে না। চামড়ার রং উজ্জ্বল হবে। লোম মসৃণ ও চকচকে হবে।
ওলান এবং দুগ্ধ শিরা কী সুগঠিত হবে?
দুধেল গাভীর ওলান বড় ও সুগঠিত এবং দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পাশাপাশি পিছনের দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান হবে প্রশস্ত । বাটগুলো ও একই আকারের হবে। চারটি বাট সমান দূরত্বে অবস্থান করবে এবং সমান্তরাল হবে। খামারীরা ওলান দেখেই দুগ্ধ ধারন ক্ষমতা অনুমান করতে পারবে।
এখন আসছে দুগ্ধ শিরার প্রসঙ্গ। দুগ্ধ শিরা মোটা ও স্পষ্ট হবে। তলপেটে নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধ শিরা আঁকাবাঁকা ভাবে বিস্তৃত থাকবে।