বাদলা (Black Quarter)
Clostridium chauvoei নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গাবদিপশুর এক ধরণের মাংসপেশিতে পচন ধরণের রোগ হয়। যাকে আমরা বাদলা বা Black Quarter বলে থাকি। সাধারণত বর্ষাকালে ও ২ মাস থেকে ২ বছর বয়সের প্রাণিতে এ রোগ বেশি হয়ে থাকে । মূলতঃ খাদ্য ও পানির মাধ্যমে এ রোগ সংক্রমিত হয়। এটি অতয়ন্ত ভয়াবহ একটি রোগ। এ রোগের জীবাণু স্পোর সৃষ্টি করে মাটিতে ৩-৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
আজকের আলোচনায় আমরা বাদলা রোগের লক্ষণ সমূহ এবং এ রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো –
বাদলা রোগে আক্রান্ত প্রাণির লক্ষণ সমূহ –
১। প্রাথমিক অবস্থায় পশুর পেটে গ্যাস, নাকের শ্লেস্মা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। প্রাণি ঠিকভাবে খেতে চায় না। খাবারে অনীহা দেখা দেয়।
২। এ রোগে প্রাণির পায়ের মাংসপেশিতে সমস্যা দেখা দেয়। প্রাণির পায়ের মাংসপেশী আক্রান্তের ফলে প্রাণি হাঁটতে পারে না ও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে ৩। মাংস পেশীতে চাপ দিলে পচ্ পচ্ শব্দ হয়। ৪। পশ্চাৎ পায়ের অংশের মাংস, ঘাড় ও চোয়ালের মাংস পেশী অধিক আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত অংশ কালচে দেখায়। ৫। রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে ক্ষুধামন্দা বা জ্বর হয়। ৬। রোগের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে এক পর্যায়ে প্রাণি হঠাৎ মারা যায়। |
রোগ থেকে মুক্তির উপায় (প্রতিকার ও চিকিৎসা) –
১। এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। তাই শুরুতেই আক্রান্ত প্রাণিকে আলাদা রাখতে হবে।
২। এ রোগে প্রাণির মাংসপেশি বিশেষ করে পায়ের পেশি দুর্বল হয়। তাই অ্যান্টিহিস্টাসিনিক জাতীয় ইনজেকশন মাংসে দিতে হবে যাতে করে দুর্বল ভাবটা কমে যায় এবং পচন না ধরে । ৩। প্রয়োজনে আক্রান্ত ক্ষতস্থানে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে টিংচার আয়োডিন প্রয়োগ করতে হবে এবং জায়গাটা পরিষ্কার গজ দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে হবে । এতে করে আক্রান্ত স্থানটি বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা পাবে। ৪। যদি প্রাণিকে বাঁচানো সম্ভব না হয় তাহলে মৃত দেহটি তৎক্ষণাৎ মাটির নিচে পুঁতে রাখা বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাহলে আক্রান্ত প্রাণি থেকে এ রোগের বিস্তার ঘটবে না। ৫। স্যাঁতস্যাঁতে এলাকা চারণভূমি বা বাসস্থানের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এরকম পরিবেশে বিভিন্ন মাইক্রো অরগানিজমের জন্ম হয় এবং তা থেকে বিভিন্ন রোগ প্রাণির শরীরে বাসা বাধে। ৬। বর্ষার ২ মাস পূর্বে ৬ মাস থেকে ২ বছরের সকল প্রাণিকে টিকা দিতে হবে। টিকা দানে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ৭। নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে প্রাণীর আবাসস্থল পরিষ্কার করতে হবে। এতে করে কোনো জীবানুর ছিটেফোঁটা থাকলে তা ধ্বংস হবে। |
বাদলা একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যধি। এ রোগে আক্রান্ত প্রাণির সর্বশেষ পরিস্থিতি মৃত্যু। কিন্তু রোগের শুরুতেই চিকিৎসা করলে এ রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দিলেই খামারীদের অনতিবিলম্বে প্রাণি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। অন্যথায় মৃত্যু ঘটতে পারে।