গলাফুলা (Haemorrhagic Septicaemia
Pasteurella multocida নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গবাদিপশুর এক ধরণের সংক্রামক রোগ হয়ে থাকে যে রোগে প্রাণির বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে গলা ফুলে যায়। এ রোগকে মেডিকেল সাইন্সে গলাফুলা বা Haemorrhagic Septicemia বলে। সকল বয়সের প্রাণিই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে । বিশেষ করে বর্ষাকালে বৃষ্টির পর স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে পশু চরালে এ রোগ বেশি হয়। আবার অসুস্থ প্রাণির সংস্পর্শ, লালা, মলমূত্র, দূষিত খাদ্য ও পানি দ্বারাও এ রোগ ছড়ায় । বাড়ন্ত বয়সের প্রাণি এ রোগে অধিক সংবেদনশীল। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত ৬-১৮ মাস বয়সের পশুদের অধিক মৃত্যু ঘটে।
চলুন এখন গলা ফুলা রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক –
রোগের লক্ষণঃ
১. প্রাণির দেহের তাপমাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায় (১০৫-১০৭ ডিগ্রী ফাঃ)
২. গলা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায় এবং ফোলা জায়গায় হাত দিলে গরম অনুভূত হয়। সাথে তীব্র ব্যথা এবং জ্বালাযন্ত্রণা হয়।
৩. পশু ঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। শ্বাস – প্রশ্বাসের কষ্ট হয়। ফলে পশুকে মুখ হা করে জিহ্বা বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস কার্যক্রম চালাতে হয় ।
৪. রোগ যখন বৃদ্ধি পায় তখন গলার পাশাপাশি জিহ্বাও ফুলে যায় এবং মুখ দিয়ে অনবরত লালা পড়ে।
৫. নাক দিয়ে ঘন সাদা কিংবা লালচে শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়। এমতাবস্থায় পশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
৬. তীব্র প্রকৃতিতে প্রাণি ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা যায়।
৭. শেষের দিকে পেটে ব্যথা হয় ও রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে ।
গলা ফুলা রোগের চিকিৎসাঃ
১। অসুস্থ প্রাণিকে আলাদা রাখতে হবে যাতে অন্যকোনো প্রাণিতে এ রোগ সংক্রমিত না হয়।
২। অনতিবিলম্বে প্রাণি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত প্রাণিকে সাধারণত সালফোনিলামাইড জাতীয় ইনজেকশন দেয়া হয়ে থাকে।
৩। আক্রান্ত প্রাণি মারা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃতদেহ সৎকার করার ব্যবস্থা করতে হবে ।
৪। সব সুস্থ প্রাণিকে সুস্থ অবস্থায় নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে । যাতে সহজে এ রোগে আক্রান্ত না হয়।
রোগের প্রতিকারঃ
১। রোগাক্রান্ত প্রাণিকে সুস্থ প্রাণি হতে আলাদা রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। কারণ অন্যান্য প্রাণির দ্বারা আক্রান্ত স্থানে আঘাত পেলে রোগাক্রান্ত প্রাণির ক্ষতি হতে পারে।
২। প্রাণিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বা একদেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তরের সময় পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
৩। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনে প্রাণির পরিচর্যার ব্যবস্থা যথাযথভাবে দিতে হবে। কারণ নতুন আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে না পারার জন্যও গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
৪। নোংরা-স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে প্রাণির রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই শুষ্ক ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় প্রাণিকে লালন-পালন করতে হবে।