তড়কা (Anthrax)
রহিম বেশ চিন্তিত। তার গোয়ালের সবচেয়ে দুধেল গরুটার গা ফাটা জ্বর। সাথে শ্বাসকষ্ট, গায়ের লোম যেন খারা হয়ে আছে আবার দেখে নিস্তেজ মনে হয়। কি করবে কোন উপায়ান্তর না দেখে উপজেলা ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয় এবং তিনি গরুটিকে পর্যবেক্ষণ করে বলেন বেশ কিছুদিন থেকেই গরুটি তড়কায় আক্রান্ত।
তড়কা (Anthrax) কী?
ব্যাসিলাস এনথ্রাসিস ( Bacillus anthracis) নামের এক প্রকার গ্রাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পশু আক্রান্ত হলে এ রোগ হয়। এ রোগের জীবাণু মাটি থেকে সরাসরি ঘাস বা অন্য খাদ্যের সাথে মুখ দিয়ে প্রাণির শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত প্রাণী হঠাৎ মারা যায় ও এ রোগে মৃত্যুর হারই বেশি।
কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন প্রাণিটি তাড়কায় আক্রান্ত?
১. আক্রান্ত প্রাণির অত্যাধিক জ্বর হয়। জ্বরের মাত্রা প্রায় ১০৩-১০৭ ডিগ্রী ফাঃ ।
২. পশুটি শ্বাসকষ্টে ভোগে ও প্রাণিটির দাঁত কটকট করে।
৩. শরীরের লোম খাড়া হয়ে ওঠে।
৪. আক্রান্ত প্রাণি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ মাথাটি নিচের দিকে নুইয়ে পড়ে বা সোজা করে দাঁড়ানোর সামর্থ্য থাকে না।
৫. ক্ষুধামন্দা, পেটফাঁপা ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দেয়। পেটে অসহনীয় ব্যথার কারণে লাথি মারে, রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব ও তরল পায়খানা হতে পারে ।
৬. রোগের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মল আলকাতরার মতো কালো ও প্রস্রাব ঘন বা শক্ত হয়ে যায় ।
৭. রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রাণি একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে ।
৮. শরীরে খিঁচুনি হয় ও অবশেষে প্রাণিটা মারা যায়।
৯. লক্ষণ প্রকাশের ১-৩ দিনের মধ্যে আক্রান্ত প্রাণি হঠাৎ পড়ে মারা যায় এবং নাকমুখ ও মলমূত্রের ছিদ্র পথ দিয়ে কালো রক্ত নির্গত হয়।
আক্রান্ত প্রাণির চিকিৎসা সেবা –
১. সাধারণত চিকিৎসা করার সুযোগ পাওয়ার আগেই আক্রান্ত গরু মারা যায়।
২. যদি আক্রান্ত গরু পাওয়া যায় তবে উচ্চ মাত্রার পেনিসিলিন, স্পেপটোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তড়কা থেকে বাঁচার প্রতিরোধ ব্যবস্থা –
১. এই রোগের জীবাণু পরিবেশে অনেকদিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তাই রোগে মৃত প্রাণির দেহ, গোবর, লালা, প্রস্রাব, রক্ত ইত্যাদিসহ ২ মিটার গভীর গর্তে পর্যাপ্ত কলিচুন সহযোগে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. মৃত প্রাণির চামড়া কখনোই ছাড়ানো যাবে না। তাহলে রোগের আরও বিস্তার ঘটবে। মনে রাখবেন এই রোগের জীবাণু দ্বারা মানুষও আক্রান্ত হয়।
৩. কোন প্রাণির আক্রান্ত হলে তাকে পৃথক করে চিকিৎসা দিতে হবে।
৪. এটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। প্রাণিজাত দ্রব্য অর্থাৎ মিট বোনমিল থেকেও জীবাণু ছড়াতে পারে বলে আক্রান্ত প্রাণির উপজাত থেকে মিট বা বোনমিল তৈরী করা উচিত নয় ।
৫. পূর্বে আক্রান্ত প্রাণির গোয়াল ঘরে জীবাণুর ছিটেফোঁটা সৃষ্টির পূর্বেই গোয়াল ঘরকে গরম ১০% NaOH (60° c ) দিয়ে ধুলে জীবাণুর মৃত্যু ঘটে ।