গাভীর সংক্রামক গর্ভপাত/ ব্রুসেলোসিস
ব্রুসেলোসিস কী?
ব্রুসেলা (Brucella) গণভুক্ত বিভিন্ন প্রজাতির জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট প্রাণির সংক্রামক রোগকে ব্রুসেলোসিস বলে। গাভীর গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস সময়ে গর্ভপাত, গর্ভফুল আটকিয়ে যাওয়া এবং অল্প সংখ্যক পুরুষ পশুর ক্ষেত্রে অন্ডকোষ প্রদাহ ও পরবর্তী পর্যায়ে প্রজনন অক্ষমতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই রোগটি সাধারণত গর্ভপাত ঘটিত পদার্থ দ্বারা দূষিত খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এছাড়া দুধ দোহনকারী বা দুধ দোহনের মেশিনের মাধ্যমে আক্রান্ত ওলান থেকে সুস্থ ওলানেও সংক্রমিত হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণঃ
১. গাভীর গর্ভধারণের ৫ মাস পর থেকে গর্ভপাত এ রোগের প্রধান লক্ষণ। গর্ভপাতের কয়েকদিন আগে থেকেই লালাভ আঠালো তরল বের হতে পারে। এদ্বারা সহজেই বোঝা যায় যে গাভীটি গর্ভধারণে অক্ষম বা তার সুষ্ঠু প্রজননে ব্যাঘাত ঘটছে।
২. একবার ব্রুসেলোসিসের কারণে গর্ভপাতের শিকার গাভীর ২য় ও ৩য় গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের সম্ভবনা থাকে। তাই এ রোগে আক্রান্ত গাভী সুস্থ হলেও গর্ভ ধারণের পর তাকে বিশেষ চিকিৎসা সেবা দিতে হবে এবং আলাদা বাসস্থানে রাখতে হবে যাতে অন্য প্রাণিতে সংক্রমিত না হয়।
৩. এ রোগে আক্রান্ত পাণি কখনো কখনো জীবিত বাচ্চা জন্মদানে সক্ষম হলেও অধিকাংশ বাচ্চা দুর্বল, অপরিপক্ক হয় এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারা যায়। তাই গর্ভপাত না হলেও সুস্থ স্বাভাবিক বাছুর জন্ম দেয়া অনেকটা দুর্লভ।
৪. সন্তান জন্ম দেয়ার সময় গর্ভফুল আটকিয়ে যাওয়া ও জরায়ু প্রদাহ গর্ভপাতের জটিলতা হিসেবে দেখা দেয়। অনেক সময় গাভীর প্রাণনাশের আশংকা থাকে।
৫. ষাঁড়ের ক্ষেত্রে এ জীবাণুর সংক্রমনে অর্কাইটিস, এপিডিডাইমিটিস এবং অন্যান্য জনন অঙ্গের প্রদাহে এসব অঙ্গ স্ফীত ও ব্যাথাপূর্ণ হয়। এ অবস্থা ষাঁড়ের বীর্যের মাধ্যমে জীবাণু নির্গত হয়। যে জীবানু দ্বারা একটি সুস্থ গাভী এবং পরবর্তীতে বাছুর আক্রান্ত হওয়ার প্রগাঢ় সম্ভাবনা থেকে যায়।
চিকিৎসা:
১. ব্রুসেলা জীবাণু আক্রান্ত প্রাণির কোষের মধ্যে অবস্থান করে বলে চিকিৎসায় তেমন সুফল পাওয়া যায় না। সতর্ক থাকাটাই এ রোগ থেকে বাঁচার মূখ্য উপায়।
২. লং অ্যাকিটং আক্সিটেট্রাসাইক্লিন এর সাথে স্টেপটোমাইসিন নির্দিষ্ট মাত্রায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতিরোধঃ
১. প্রথমত, আক্রান্ত প্রাণি সনাক্তকরণ ও স্বতন্ত্রীকরণ করতে হবে। অতঃপর মেরে ফেলে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
২. আক্রান্ত গাভীকে সুস্থ গাভী থেকে পৃথক রেখে লালন – পালন করতে হবে। এতে করে আক্রান্ত গাভী দ্বারা সুস্থ গাভীর মধ্যে রোগ সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
৩. খামারে বা বাড়িতে নতুন প্রাণি আমদানির ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র রাখার পর পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে জীবাণুর উপস্থিতি নিশ্চিত হলে প্রাণিকে মেরে ফেলা এ রোগ নিয়ন্ত্রণের উত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তাহলে শুরুতেই বোঝা যাবে যে কোন গরুটি আক্রান্ত এবং সে অনুযায়ী খামারীরা ব্যবস্থা করতে পারবে।
৪. গর্ভপাত ঘটিত ফিটাস, প্লাসেন্টা ও জরায়ুর নিঃসরণ মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এতে করে গর্ভবতী গাভীর মধ্যে কোন রোগ – জীবাণু থাকলেও তা বিস্তার করতে পারবে না।
৫. আক্রান্ত প্রাণি পরীক্ষার আগে বা পড়ে আসবাবপত্র এবং হাত জীবাণুনাশক দ্বারা ভালভাবে ধৌত করতে হবে। যাতে করে রোগের জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। প্রয়োজনে জীবাণুনাশক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে।
৬. আক্রান্ত প্রাণির আশেপাশে জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। যাতে জীবানুর ছিটেফোঁটা থাকলেও তা ধ্বংস হয়ে যায়।
গরুর বিভিন্ন মারাত্মক রোগের মধ্যে গাভীর সংক্রামক গর্ভপাত বা ব্রুসেলোসিস একটি। এটি একটি সংক্রামক ব্যাধি। সহজেইএক প্রাণি থেকে আরেক প্রাণিতে সংক্রমিত হয়। কিন্তু এ মারাত্মক রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা সেবাও নেই। তাই খামারীদের সতর্ক থাকা প্রধান কর্তব্য যাতে এক প্রাণি থেকে আরেক প্রাণিতে সংক্রমিত হতে না পারে এবং রোগের বিস্তার না ঘটে।