ডায়রিয়া ( Diarrhoea )
ছোটদের শিক্ষামূলক মিনা কার্টুনের বদৌলতে আমরা অনেকেই ছোটথেকে ডায়রিয়া শব্দটার সাথে কমবেশি পরিচিত। আবার অনেকে নিজেরাই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কিছুটা ভুক্তভোগী। কিন্তু মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাণিতে এ রোগটি বেশ ভয়াবহ ভাবে বাসা বাধে। এমন একটি প্রাণি গরু।
মূলত প্রাণির তরল মলত্যাগ কে আমরা ডায়রিয়া বলে থাকি। আজকে আমরা গরুর ডায়রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবোঃ
কীভাবে বুঝবো গরুটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত?
উদরাময় বা ডায়রিয়া বলতে বুঝায় পশুর ঘন ঘন তরল বা পাতলা মলত্যাগ। এক্ষেত্রে মলের সাথে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি, লবণ,খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায়। যার কারণে পশুর মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় –
১। রােগাক্রান্ত পশুটি অনেক দুবর্ল হয়ে পড়ে। খাবারে অনীহা দেখা দেয়। এমনকি মাঝেমধ্যে খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে বিষক্রিয়া হয়ে থাকে ।
২। পশুর মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরতে থাকে। তাপমাত্রা নিচে নেমে আসে বিধায় শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
৩। পশুটি এতোটা দুর্বল হয়ে হয়ে পড়ে যে দাঁড়াবার জন্য পায়ে জোর পায় না। অধিকাংশ সময় মাটিতে শুয়ে থাকে বা দেয়ালে হেলান দিয়ে থাকে ।
৪। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ায় সচরাচর বাছুরের বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে । কারণ একটি পূর্ণ বয়স্ক গাভীর তুলনায় বাছুরের সহ্য ক্ষমতা এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাছুরকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
কী কী কারণে পশুর ডায়রিয়া রোগটি হয়ে থাকে?
বিভিন্ন কারণে কোন প্রাণি ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেমনঃ
১। প্রাণির শরীরে যদি ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া,ছত্রাক, প্রোটোজোয়া জাতীয় বিভিন্ন ধরনের অণুজীব বাসা বাধে তবে তা থেকে এ রোগ হতে পারে। আবার বিভিন্ন ধরেনর কৃমির আক্রমণেও গবাদি পশুর ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
২। বিভিন্ন প্রকার খাদ্য দ্বারা বিশেষ করে মাঠে পঁচা দূষিত খড়,লতা-পাতা,পঁচা পানি খাওয়ার ফলে উদরাময় বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে। দেশের বিভেন্ন স্থানে বর্ষার পানি নামার পর মাঠ-ঘাট,নদী-নালা,ডোবায় খড়, লতা-পাতা পচে পানি দূষিত হয়ে থাকে। এ সময়ে মাঠে-ঘাটে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ বিরাজ করার ফলে পশুতে বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণুর আক্রমণ বেড়ে যায়, কৃমির উপদ্রব বেড়ে যায়। এসব নোংরা পানিতে বিভিন্ন অণুজীব বাসা বাধে। তাই এধরণের পঁচা – দূষিত খাদ্য এবং পানি গ্রহণের মাধ্যমেও পশুর উদরাময় হতে পারে।
৩। বর্ষা বা বন্যার পর মাঠ-ঘাটের পানি নেমে গেলে প্রচুর কঁচি ঘাস, কচুরিপানা জন্মে থাকে । পশুর এই কঁচি ঘাস, কচুিরপানা বেশি বেশি খাবার ফলেও ডায়রিয়ায় আক্রমণ হতে পারে।
কীভাবে ডায়রিয়া নির্মূল করবো?
গবাদি পশুর উদরাময়ের চিকিৎসা অর্থাৎ পাতলা পায়খানা দমন করতে হলে উদরাময়ের কারণগুলা প্রতিরোধ করেত হবে। এর জন্য যা যা করণীয় –
১। পশুকে স্যাঁতস্যাঁতে কাদাপানিতে বা নোংরা স্থানে না রেখে শুকনা পরিষ্কার জায়গায় রাখতে হবে। বাছুরকে জন্মের পরে প্রথম দুধ বা শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এই দুধে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রতিরোধক ব্যবস্থা থাকে যা বাছুরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কে দৃঢ় করে।
২। পশুকে নিয়মিত সংক্রামক রোগের টিকা দিতে হবে। এতে করে পশুর শরীরে সহজেই কোন রোগ বাসা বাধতে পারবে না।
৩। ডায়রিয়া হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরমার্শ মোতাবেক পশুর চিকিৎসা করাতে হবে। কৃমি প্রটোজোয়ার আক্রমণে পাতলা পায়খানা হলে এদেরকে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে। অল্প বয়স হতেই পশুকে নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
৪। পশু যাতে মাঠ-ঘাটের পঁচা ঘাস, লতা-পাতা না খেতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পশুকে প্রচুর পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হবে যেন মাঠে-ঘাটের পঁচা পানি না খায়।
৫। অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে পশুর শরীর থেকেজলীয় অংশ বের হয়ে যায়। তাই পশুকে খাদ্য ববং পানির সাথে নিয়মিত ঝোলাগুড় এবং লবণ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে । প্রয়োজনে ডেক্সট্রোজ স্যালাইন বা ইনজেকশন দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
মানুষের যেমন ডায়রিয়া হয়ে থাকে তেমনি গবাদি পশুতেও উদরাময় বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ডায়রিয়াকে পূর্ণাংগ রোগ বলা যায় না। এটি বিভিন্ন ধরনের রােগের লক্ষণ। কিন্তু কখনোই এ রোগকে অবহেলা করা যাবে না। তাহলে প্রাণিতে বড় কোন রোগ বাসা বাধতে পারে।