বিভিন্ন দুগ্ধজাত দ্রব্যের প্রস্তুত প্রণালী পদ্ধতিঃ মাখন এবং ঘি
ভোজনরসিক বাঙালীর খাবারের মান ও স্বাদ বহুগুনে বাড়িয়ে দিতে মাখন ও ঘি এর কোনো তুলনা নেই। কিন্তু আপনি জানেন কি কীভাবে মাখন ও ঘি প্রস্তুত করা হয়? মাখন এবং ঘি উভয়ই মূলতঃ দুগ্ধজাত পণ্য। গরুর দুধ সংরক্ষণ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এসব পণ্য প্রস্তুত করা হয় এবং চাহিদা অনুযায়ী বাজারজাত করা হয়। যেমনঃ ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে ঘি এর কোনো জুরি নাই। কিন্তু হঠাৎ হাতের কাছে এসব পণ্য যদি পাওয়া না যায় তাহলে কী করবেন? ঘরোয়া পদ্ধতিতেও খুব সহজে আমরা এ দ্রব্য গুলো প্রস্তুত করতে পারি। আবার দুগ্ধজাত পণ্য খামারীদের জন্য বাড়তি আয়ের উৎস। খুব সহজেই এসব পণ্য প্রস্তুত করে খামারীরা বাজারজাত করতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক জনপ্রিয় দু’টি দুগ্ধজাত পন্য মাখন এবং ঘি এর ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রস্তুত প্রণালী –
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ”মাখন” প্রস্তুত প্রণালীঃ
যা যা উপকরণ প্রয়োজন এবং এর পরিমাণঃ নিচের ছকে মাখন প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহ এবং তার পরিমাণ উল্লেখ করা হলোঃ
উপকরণ সমূহ | পরিমাণ |
|
|
প্রস্তুত পদ্ধতিঃ উপকরণ সংরক্ষণ করা তো হয়ে গেলো। এবার চলুন জেনে নেই উপকরণগুলো কীভাবে ব্যবহার করে খুব সহজেই মাখন প্রস্তুত করা যায় –
[ বি.দ্রঃ বাটার / মাখনের অনেক রকম প্রকারভেদ হয় । তবে আমরা এখানে সবচেয়ে বহুল ব্যবহুত বেজলাইন পদ্ধতি টা নিয়ে আলোচনা করবো ]
- যদি ক্রিমের জোগান না থাকে তাহলে প্রথমেই আমরা দুধ থেকে ক্রিম আলাদা করে নেব। (দুধ থেকে ক্রিম প্রস্তুতের পদ্ধতি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে )। ক্রিম প্রস্তুতের সময় বিবেচনায় রাখতে হবে যে ফ্যাট এর পরিমাণ যাতে ৩৫-৪০% থাকে। যদি ক্রিমে ফ্যাট এর পরিমাণ উল্লেখিত পরিমাণ এর বেশি থাকে তবে স্কিম মিল্ক যোগ করবো। আর যদি কম থাকে তবে বেশি ফ্যাটের ক্রিম যোগ করবো ।
- তারপর প্রস্তুতকৃত ক্রিমকে ৮২-৮৪০সে তাপমাত্রায় অল্প সময়ের জন্য (২০ সেকেন্ড এর মত) রাখবো । এতে ক্রিমে কোন ক্ষতিকর অনুজীব থাকলে তা ধ্বংস হয়ে যায়।
- অনুজীব ধ্বংসের পর কুলিং এর পালা। ক্রিমকে ৫-১০০সে তাপমাত্রায় কুলিং করতে হবে এবং এই তাপমাত্রায় আরো ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে।
- কুলিং এর পর ক্রিম চার্নিং এর জন্য প্রস্তুত হয়। তারপর আমরা এই ক্রিমকে চার্নিং মেশিনে দিয়ে চার্ন করতে থাকবো ।
- চার্নিং এর পরে বাটার যখন হয়ে যাবে তখন বরফ পানি দিয়ে বাটার কে ধুয়ে ফেকতে হবে, এতে বাটারমিল্ক বাটারের গায়ে লেগে থাকলে ধুয়ে যাবে। কোনোমতেই বাটারের গায়ে বাটারমিল্ক লেগে থাকতে দেয়া যাবে না।
- এরপর বাটারের ২-২.৫% লবণ মেশাতে হবে। এতে মাখনের জীবনিশক্তি বাড়ে, স্বাদও বৃদ্ধি পায়।
সবশেষে কাঠের ব্যাট দিয়ে কিছুক্ষণ মাখনকে পিটিয়ে (ওয়ার্কিং) নির্দিষ্ট মাপে নিয়ে আসতে হবে এবং -২৩ ০সে থেকে -২৯ ০সে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। অন্য স্বাদের দ্রব্যাদির সংস্পর্শে যাতে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
মাখন বানানোর পদ্ধতি এর ফ্লোচার্ট –
ঘরোয়া পদ্ধতিতে “ঘি” প্রস্তুত প্রণালীঃ
যা যা উপকরণ প্রয়োজন এবং এর পরিমাণঃ নিচের ছকে ঘি প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহ এবং তার পরিমাণ উল্লেখ করা হলোঃ
১. পরিমাণমতো বাটার ২. একটা বড় কড়াই বা সমমানের পাত্র ৩. চুলা |
প্রস্তুত পদ্ধতিঃ ঘি তৈরী করার পদ্ধতি মাখন তৈরির পদ্ধতি থেকে তুলনামূলক সহজ । চলুন জেনে নেই উপকরণগুলো কীভাবে ব্যবহার করে খুব সহজেই ঘি প্রস্তুত করবো-
- প্রথমে সংগৃহিত মাখনকে কড়াইয়ে নিয়ে ৯০-১০০০সে তাপমাত্রায় ক্রমাগত জাল দিতে হবে । জাল দেয়ার প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান রাখতে হবে যতক্ষণ না ফেনা সরে গিয়ে ঘিয়ের বাদামি রং দেখা না যায় এবং ঘিয়ের গন্ধ না পাওয়া যায় ।
- পুরো জাল দেয়ার প্রক্রিয়ার সময় ক্রমাগত মাখনগুলো নড়াচড়া করাতে হবে যাতে করে একসাথে জমে না যায় এবং মাখন থেকে ঠিকঠাক ভাবে ঘি প্রস্তুত হয়। জাল দেয়ার মাঝে মাঝে সৃষ্ট ফেনাগুলো ফেলে দিতে হবে।
- মাখন থেকে তরল ঘি প্রস্তুত হয়ে গেলে তা সংরক্ষণ করার পালা। এপর্যায়ে তরল ঘি কে কিছুটা ঠান্ডা করে একটা পাত্রে মসলিন কাপড় নিয়ে পাত্রের সম্পূর্ণ ঘি ঢেলে দিতে হবে। যাতে ঘি এর কণা গুলো ঘি থেকে আলাদা হয়ে যায়।
- সবশেষে সংরক্ষণের পালা। ছেকে নেয়া ঘিকে চাহিদা অনুযায়ী প্যাকেট করে বাজারজাত করা যায়।