খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
পরিবেশ দূষণ রোধে খামারীদের বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ খামার থেকে উৎপাদিত বর্জ্য থেকে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর জন্ম হতে পারে। আবার গরু কিংবা বাছুর সে বর্জ্য এর সংস্পর্শে আসলে বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। যার ফলে একদিকে যেমনঃ গরুর উৎপাদন কমে যায়, অন্যদিকে চিকিৎসা সেবার জন্য ও খামারীদের বাড়তি খরচ করতে হয়। অতঃপর খামারীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় খামারীদের সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিবেশ সুরক্ষায় খামারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে –
১. বর্জ্যের পূণর্ব্যবহারঃ গবাদিপ্রাণি ও হাঁস-মুরগি ইত্যাদির সরবরাহকৃত খাদ্যের ৫০-৬০% মল ও মূত্র হিসাবে বেরিয়ে আসে যা আংশিক বা পরিপূর্ণভাবে নষ্ট বা অপচয় হওয়ার কারণে পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটে। তাই খামারীদের পশুদের বর্জ্য একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে এসব বর্জ্য থেকে জ্বালানী তৈরি করা কিংবা পরবর্তীতে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
২. মিথেন গ্যাস হ্রাসঃ খামার ব্যবস্থাপনায় গবাদি প্রাণির জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করায় রুমেন থেকে বিষাক্ত মিথেন উৎপাদন প্রায় ৩০% হ্রাস পায় ও পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৩. মৃত প্রাণি সংরক্ষণঃ প্রাণির রােগ মুক্তি ও পরিবেশ সুরক্ষায় মৃত প্রাণির চামড়া ছাড়ানাে যাবে না। মৃত পশু-পাখি যত্রতত্র মাঠে ময়দানে বা ঝােপঝাড়ে না ফেলে মাটিতে পুঁতে রাখত হবে।
৪. গোয়ালঘর জীবাণুমুক্তকরণঃ দৈনিক একই সময় গোয়াল ঘর ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মাঝে মাঝে ঘরে স্যাভলন, ডেটল, ফিনাইল ও আয়োসান মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। একই সময়ে গাভীর শরীর ঘসে গোসল করাতে হবে। এতে করে রোগ জীবাণু অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে এবং গাভীর শরীরে বাসা বাধতে পারবে না।
৫. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টঃ পরিবেশ সুরক্ষায় গােবর/বিষ্ঠা, মূত্র, প্রাণি খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ যথাযথভাবে ও সময়মত অপসারণ করলে পরিবেশ সুরক্ষিত হবে। এ কাজে বায়ােগ্যাস প্ল্যান্ট করা যেতে পারে।
৬. কম্পোস্ট সার প্রস্তুতঃ গােবর/বিষ্ঠা থেকে কম্পােষ্ট সার প্রস্তুত করা হলে একদিকে পরিবেশে দূর্গন্ধ দূর হয় ও অন্যদিকে উৎপাদিত কম্পােষ্ট সার কৃষিতে ব্যবহার করায় কৃষির উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। তাই গোবর বা বিষ্ঠা ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং পরিবেশ বান্ধব কম্পোস্ট সার প্রস্তুত করতে হবে।
৭. সামাজিক নিরাপত্তাঃ বায়ােগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে পরিচ্ছন্ন জ্বালানী উৎপাদন হওয়ায় দুষণমক্ত বায়ু ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি ও উন্নত মানের জৈব সার উৎপাদন হয়। তাই বায়ােগ্যাস প্ল্যান্ট সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখছে।
৮. প্রাণির রোগ নিয়ন্ত্রণঃ বর্জ্য সঠিকভাবে কম্পােষ্ট করা হলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মারা যায় ও প্রাণির রােগ নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই সঠিকভাবে খামারের বর্জ্য কম্পোস্ট করার দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
কম্পোস্ট ও কম্পোষ্টিং প্রক্রিয়া
গবাদিপশুর বর্জ্য পদার্থ থেকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কম্পোস্ট হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে আলোচনা করা হলো –
১. কম্পোস্ট হচ্ছে পচা জৈব উপকরণের এমন একটি মিশণ্র যা উষ্ণ আর্দ্র পরিবেশে অণুজীব কর্তৃক প্রক্রিয়াজাত হয়ে উদ্ভিদের সরাসরি গ্রহন উপযােগী পুষ্টি উপকরণ সরবরাহ করে।
২. এটি একটি নিয়ন্ত্রিত জৈবপচন প্রক্রিয়া, যা জৈব পদার্থকে স্থিতিশীল দ্রব্যে রূপান্তর করে।
৩. যে সকল অনুজীব পচনশীল পদার্থকে তাদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে, সে সকল অনুজীবের উপর এ প্রক্রিয়া নির্ভরশীল।
৪. কম্পােষ্টিং প্রক্রিয়ায় বর্জ্যের গন্ধ ও অন্যান্য বিরক্তিকর সমস্যা সম্বলিত পদার্থকে স্থিতিশীল গন্ধ ও রােগ জীবাণু, মাছি ও অন্যান্য কীট পতঙ্গের প্রজননের অনপুযােগী পদার্থে রূপান্তরিত করে।
৫. মুরগির বিষ্টা ও আবর্জনার প্রকারভেদে কম্পােস্ট সার প্রস্তুত হওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে কম্পােস্ট সার হিসাবে তখনই উপযুক্ত হবে যখন তার রং গাড় বাদামী হবে, তাপ কমে আসবে এবং একটা পঁচা গন্ধ বের হবে।
গবাদিপশু থেকে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। কিন্তু এ বর্জ্যকে যদি পুনরায় জ্বালানি কিংবা সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে তা যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী। এক্ষেত্রে কম্পোস্ট সারের কোনো বিকল্প নেই। তাই খামারীরা যদি গবাদিপশুর বর্জ্য পদার্থ সংরক্ষণ করে এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে সার কিংবা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে তবে তা বাড়তি রোজগারের উৎস হবে এবং খামারীরাও আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।