বাছুরের রোগবালাই এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা
যেকোনো প্রাণীই জন্মের পর পর অনেক বেশি অসহায় থাকে। কারণ মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার পর নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়াটা তাদের জন্য বড় চ্যালেন্জ। বাছুরেরও জন্মের পর পরই নানান রোগ বালাই হতে পারে। এ ব্যাপারেই আমাদের আজকের আলোচনা “বাছুরের রোগবালাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা”-
বাছুরের কী কী রোগ ব্যাধি হতে পারে?
জন্মের পর থেকেই বাছুরের নানাবিধ রোগ-ব্যাধি হতে পারে। বাছুরের জন্য যে কোন রোগই মারাত্বক। কারণ বয়স্ক প্রাণির চেয়ে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। আমাদের দেশে সাধারণতঃ বাছুরের যে সব রোগ হয়, সেগুলো হলো-
ক) সংক্রামক রোগ
খ) কৃমি বা পরজীবীজনিত রোগ
গ) প্রোটজোয়াজনিত রোগ
ঘ) সাধারণ রোগ-ব্যাধি।
ক) সংক্রামক রোগঃ
সংক্রামক রোগ বলতে বোঝায় একজন থেকে আরেক জনের মধ্যে যে রোগ বর্তায়। অর্থাৎ একটি বাছুর থেকে খামারীর অন্যান্য বাছুর গুলোতে যে রোগ সংক্রমিত হয় তাই সংক্রামক রোগ। বাছুরের নানা ধরনের সংক্রামক রোগ হয়ে থাকে, যার মধ্যে মারাত্মক রোগগুলো হলোঃ
১. সাদা বাহ্য বা কাফ স্কাওয়ার
২.নেভাল ইল বা নাভীর রোগ
৩. সালমোনেলোসি
৪. বাছুরের ডিপথেরিয়া
৫.নিউমোনিয়া
৬. বাদলা
৭. তড়কা
৮.গলাফুলা
৯. ধনুস্টংকার
১০.ক্ষুরারোগ
১১. জলাতংক
১২. গো-বসন্ত।
খ) কৃমি বা পরজীবীজনিত রোগঃ
পরজীবী অর্থ হলো অপরের উপর জীবনধারণ করা। বাছুরের উপর বিভিন্ন পরজীবী জীবনধারণ করে থাকে। যেগুলো বাছুরের কোন উপকার না করে ক্ষতিসাধন করে থাকে।
পরজীবী সাধারনত দুই ধরনের হয় যেমনঃ-
(১)দেহাভ্যন্তরের পরজীবী
(২) বহিঃদেহের পরজীবী
দেহাভ্যন্তরের পরজীবী কী?
এটি আসলে বাছুরের কৃমি জাতীয় রোগ । বাছুর খুব তাড়াতড়ি এ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে বেশির ভাগ বাছুরই দেহাভ্যন্তরের পরজীবী অর্থাৎ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। দেহাভ্যন্তরের পরজীবী সাধারনত তিন ধরনের হয়, যেমন-
১)গোল কৃমি
২) ফিতা কৃমি
৩) পাতা কৃমি
দেহাভ্যন্তরের পরজীবী বাছুরের অনেক ক্ষতি সাধন করে কেননা তারা শরীর হতে পুষ্টি গ্রহণ করে। তাই এসব পরজীবী দমনে বাছুরকে দু’মাস বয়স হলে কৃমিনাশক খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে।
বহিঃদেহের পরজীবী কী?
বহিঃদেহের পরজীবি কে মূলতঃ দেহের পোকা বলা হয়। এরা বাছুরের ত্বকে বাস করে ত্বকের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। বহিঃদেহের পরজীবীর মধ্যে বাছুরে আঁঠালি, উকুন, মাছি, মাইটস বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বহিঃদেহের পরজীবী দমনে বাছুরের শরীর ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। বাছুরের বয়স ৬ মাস হলে বহিঃদেহের পরজীবী ধ্বংসকারী ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
গ) প্রোটোজোয়াজনিত রোগ
প্রোটোজোয়া এক প্রকার এককোষী জীব বা আদ্যপ্রাণী। বাছুর বিভিন্ন ধরনের প্রোটোজোয়া যেমনঃ বেবেসিয়া, এনাপ্লাজমা, ককসিডিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে বাছুরে সাধারণতঃ ককসিডিয়া নামক প্রোটোজোয়ার আক্রমণ বেশী হতে দেখা যায়।
ঘ) সাধারণ রোগ-ব্যাধি
বাছুরের সাধারণত রোগ-ব্যাধির মধ্যে রয়েছে –
১.বিষক্রিয়াজনিত রোগ
২.অপুষ্টিজনিত রোগ
৩. পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ যেমনঃ পেট ফাঁপা, উদারাময়, কোষ্ঠকাঠিণ্য এবং বিপাকীয় রোগ।
বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ
লাভজনক গবাদি প্রাণি পালনে রোগবালাই অন্যতম প্রধান সমস্যা। এ সমস্যাকে কার্যকরী ভাবে প্রতিহত করতে হবে। যে সকল রোগের টিকা পাওয়া যায় সে সকল রোগের টিকা সঠিক সময়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বাছুর বিভিন্ন কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে কেঁচো কৃমি বাছুরের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে। মায়ের রক্ত প্রবাহের সাথে গর্ভস্থ বাচ্চা এবং মায়ের দুধের মাধ্যমেও বাছুর এ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। বাছুর জন্মের পর পরই এক সপ্তাহ বয়সের মধ্যেই বাছুরের ওজন অনুপাতে সুবিধাজনক কোন কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।
হঠাৎ করে কোন কারণে বাচ্চা যেন অসুস্থ হয়ে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার:
১। গাভীর খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকা প্রয়োজন। এতে করে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
২। বাচ্চা জন্ম নেবার ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে গাভীর শালদুধ খাওয়াতে হবে। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হবে।
৩। দূর্বল বাছুরকে প্রচুর দুধ খাওয়াতে হবে।
৪। বাছুরকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনো স্থানে রাখতে হবে।
৫। খাবারের পাত্র ও পানির পাত্র সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৬। হঠাৎ বাছুরের যেন ঠান্ডা বা গরম না লাগে সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
৭। কয়েক দিন পর পর পরিষ্কার করে বিছানা বদল করে নতুন করে শুকনা খড় দিয়ে বিছানা করে দিতে হবে