কী ধরণের খামার শুরু করবো
ধরুন, আপনি কৃষিকাজের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গতবছর পেঁয়াজের কড়া বাজারদর দেখে এবছর আপনি পেঁয়াজ চাষ করলেন। কিন্তু এবছর পেঁয়াজের বাজারদর কেজি প্রতি ৩৫ টাকা হয়েছে; যেখানে গতবছর কেজিপ্রতি ৮০/৯০ টাকা ছিল। অতঃপর ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ান্তর নাই। কিন্তু ডেইরি ফার্ম এমন একটা ব্যবসা যেখানে আপনি চাইলেই লাভবান হতে পারবেন।
ডেইরি ফার্ম শুরু করার আগে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে যে কেমন খামার করতে চান। যেমন- আপনি কি দুগ্ধ উৎপাদন খামার করবেন নাকি গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা করবেন। এসম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দিতে আমাদের আজকের আলোচনা ” কি ধরণের খামার শুরু করবো “ –
নির্ধারণ পর্বঃ আপনি যখন গরুর খামার শুরু করার কথা ভাববেন তখন সর্বপ্রথম আপনাকে বেছে নিতে হবে যে কি ধরণের খামার আপনি তৈরী করতে চান। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, খামারের ধরণ নির্ধারণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
কি ধরণের খামার নির্মাণ করবো তা নির্ধারণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ ব্যবসার বিভিন্ন দিকবিদিক এর উপর নির্ভরশীল। যখন একটা খামার নির্ণয় করা হয়, তা থেকে বিভিন্ন ধরনের ফলন আসতে পারে। যেমন-
১) খামার হতে পারে শুধু দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য;
২) দুগ্ধ উৎপাদনের পাশাপাশি খামারিরা নানা দুগ্ধজাত পণ্য ও উৎপন্ন করতে পারে।
৩) দুধ ছাড়াও অতিরিক্ত বাছুর, বকনা বাছুর, এবং গরু মোটাতাজা করে বিক্রিও করা যেতে পারে।
এখন আপনি যদি শুধুমাত্র দুধ বিক্রির উদ্দেশ্যে খামার করতে চান তাহলে যে বিষয়গুলোর উপর লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো:
- খামারের অবস্থান এমন হতে হবে যাতে দৈনিক দুধ বিক্রি করা সহজ হয়। জনবহুল কিন্তু বিক্রেতার থেকে ক্রেতার চাহিদা বেশি এরকম স্থান সবচেয়ে লাভজনক।
- খামারের জন্য যখন গাভীর জাত নির্ধারণ করা হবে তখন মাথায় রাখতে হবে যে কোন কোন প্রজাতির গরু বেশি দুগ্ধ উৎপাদন করে। অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই যাতে দুধের উৎপাদন কমে না যায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে ।
- যাতায়াতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। এতে করে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা সহজ হবে।
- দুধ সংরক্ষণ করার সুবিধা থাকতে হবে। যাতে অতিরিক্ত দুধ সংরক্ষণ করা যায় এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যও নষ্ট না হয়।
- ব্রিডিং ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা এমন ভাবে করতে হবে যাতে ফার্মে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ সবসময় একই থাকে।
আবার দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন এর জন্য খামার নির্ণয় করতে চাইলে যে ব্যাপারগুলি মাথায় রাখতে হবে তা হলো:
- আশেপাশের বাজার দর এবং চাহিদা যাচাই করে নিতে হবে যাতে দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা থাকে।
- দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য এমন গাভীর জাত বাছাই করতে হবে যাদের দুধে চর্বির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। এক্ষেত্রে মহিষ ও বিবেচ্য।
- দুগ্ধজাত পণ্য বাজারজাতকরণের আগে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা জরুরী।
- দুগ্ধজাত দ্রব্য এর মান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন-
- দুধে চর্বির পরিমাণ কম বেশি হলে অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করার সময় রকমফের হয়, সেজন্য চর্বির পরিমাণ যাতে ঠিক থাকে সেই অনুযায়ি নির্দিষ্ট অনুপাত ঠিক করতে হবে।
এই ছিলো ” কি ধরণের খামার শুরু করবো ” বিষয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করছি খামারিরা ছোট্ট এই অনুচ্ছেদটির মাধ্যমে উপকৃত হবেন।