গর্ভফুল আটক হওয়া বা রিটেইন্ড প্লাসেন্টা
সাধারণত গাভীর গর্ভধারণের ৩২দিন পর থেকেই গর্ভফুলের কার্যক্রম শুরু হয়। গর্ভফুলের মাধ্যমে বাছুর মায়ের কাছ থেকে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। সাধারণত গাভী প্রসবের ৬-১২ ঘন্টার মধ্যেই গর্ভফুল পড়ে যায়। কিন্তু যদি বাচ্চা প্রসবের ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে গর্ভফুল না পড়ে তবে তাকে গর্ভফুল আটক হওয়া বা রিটেইনড প্লাসেন্টা বলে।
কারণ:
রিটেইনড প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল আটকে থাকার বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে-
- বাছুরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে
- গাভীকে অনিয়মিত খাবার, দানাদার খাবার দিলে
- ডেলিভারিতে অনেক লম্বা সময় লাগলে
- গাভীর রক্তে ক্যালসিয়াম কিংবা অন্য খনিজ পদার্থের অভাব হলে
- বিভিন্ন হরমোনজনিত কারণ
- অতিরিক্ত গরমে ডেলভারি হওয়া
- জোরপূর্বক বাচ্চা টেনে হিঁচড়ে বের করলে
- নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে বাচ্চা প্রসব করলে, ইত্যাদি।
লক্ষণ এবং সমস্যা:
- প্রধান লক্ষণ হচ্ছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গর্ভফুল না পড়া
- গর্ভফুল অর্ধেকটা বের হয়ে নিচের দিকে ঝুলে থাকে
- গাভীর ক্ষুধা কমে যায় এবং জ্বর থাকে
- প্রসব করার সময় দূর্গন্ধ বের হবে।
চিকিৎসা:
- প্রথমে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে গর্ভফুল না পড়লে বাহিরের ঝুলন্ত অংশ যতদূর সম্ভব টেনে ধরে কেটে দিতে হবে।
- যোনীদ্বারে যাতে মাছির উপদ্রব কম হয় সেজন্য ভ্যাজাইনার চারিদিকে তারপিন তৈল লাগিয়ে রাখতে হবে।
- গর্ভফুল হাত দিয়ে টেনে বের করা যাবে বা এতে জরায়ুতে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।
- কয়েক দিনের মধ্যেই গর্ভফুল আপনা আপনি পঁচে বের হয়ে যাবে জরায়ুর কোনরুপ ক্ষতি ছাড়াই। তবে এক্ষেত্রে ইউট্রোকেয়ার সিরাপ খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
- গাভীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
প্রতিরোধ:
- গর্ভাবস্থায় গাভীকে প্রচুর কাঁচা ঘাস ও সরিষার খৈল খাওয়াতে হবে।
- ঝুলন্ত অংশের সাথে ইট বা কাঠের টুকরো বেঁধে দিলে গর্ভফুল পড়তে সহজ হয়।
সতকর্তা:
গর্ভফুল হাত দিয়ে বের করা যাবে না বা টানা হেঁচড়া করা যাবে না, এতে জড়ায়ুর ক্ষতিসহ সেপ্টিক ম্যাট্রাইটিস, পায়োমেট্রা, রক্তক্ষরন, স্থায়ীভাবে গর্ভধারন করতে না পারা এমনকি জরায়ু প্রদাহে আক্রান্ত হয়ে গাভীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদি হাত দিয়েই গর্ভফুল বের করার একান্ত প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই বাচ্চা প্রসবের কমপক্ষে তিন দিন পর অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তার দ্বারা বের করা উচিত।
Source: