গর্ভবতী গাভীর পরিচর্যা

Published by Khamar-e Agro Research Team on

গাভীর গর্ভবতী অবস্থায় কিছু বাড়তি যত্ন এবং পরিচর্যার দরকার পরে। তাই এসময় খামারীদেরকে গাভীর ভালোমন্দের দিকে একটু বিশেষ নজর দিতে হয়। যেমন- এমতাবস্থায় বাসস্থান কেমন হবে, গর্ভবতী গাভীকে কী কী খাওয়ানো উচিত কী উচিত না ইত্যাদি। অনেক সময় সঠিক পরামর্শের অভাবে খামারীরা এর গুরুত্ব এবং করণীয় সম্পর্কে ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। তাই এই নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা ” গর্ভবতী গাভীর পরিচর্যা ” –

 

আলোচনার বিষয় বস্তুঃ

১. গর্ভবতী অবস্থায় বাসস্থান

২. গর্ভবতী গাভীর খাদ্য 

 

গর্ভবতী অবস্থায়  বাসস্থানঃ গর্ভবতী গাভীকে বাছুর জন্ম দেয়ার কিছু দিন পূর্বে আলাদা ঘরে স্থান দিতে হবে। কারণ এ সময়টায় গাভীর জন্য বাড়তি যত্ন এবং চলাফেরায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় যাতে করে অন্য গরু বা বাছুর দ্বারা কোনো ভাবে আঘাত না পায়। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাঃ

 

১। গর্ভবতী পশুদের  ডেলিভারির অন্তত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ  তারিখের আগে একটি গর্ভবতী বাসস্থানে ( Pregnant Shed) স্থানান্তরিত করা হয়। এখানে তাদের বিশেষ যত্ন এবং পরিচর্যা করা হয়। 

 

২। গর্ভাবস্থার অগ্রণী পর্যায়ে প্রাণী রাখার জন্য ৩ মি x ৪ মি (১২ বর্গমিটার) Pregnant shed  প্রয়োজন ; যাতে গর্ভবতী প্রাণী অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং সঠিক ভাবে পরিচর্যা করা সুবিধা হয়। আবার বাছুর জন্ম দেয়ার জন্য বেশ বড় মাপের জায়গা দরকার পরে গাভীর জন্য। 

 

৩। গর্ভবতী গাভীর গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে যেকোনো সময় প্রসব বেদনা উঠতে পারে। তাই গর্ভবতী পশুদের আরও ভাল তদারকির জন্য খামারীর বাসস্থান পশুর আবাসস্থলের নিকটে অবস্থিত হওয়া উচিত।

 

৪। প্রয়োজনীয় Pregnant shed এর সংখ্যা খামারের মোট প্রজননযোগ্য গাভীর সংখ্যার ১০% হতে হবে। অর্থাৎ মোট প্রজনন যোগ্য গাভী  যদি ৫০ টা থাকে তবে Pregnant shed এর সংখ্যা হবে ৫ টি। এতে করে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ হবে এবং গাভী ও নিরাপদে থাকতে পারবে। 

৫। অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করার জন্য, আগাম গর্ভাবস্থার প্রাণীকে অবশ্যই pregnant shed এ পৃথক করতে হবে।  প্রেগন্যান্ট শেডে স্থানান্তরের আগে জায়গাটি অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সঠিকভাবে জীবাণুনাশিত, পরিষ্কার, নরম এবং শোষণকারী litter মেঝে তে বিছানো হতে হবে । বাসস্থান কোনোভাবেই নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে এবং জীবাণুযুক্ত হওয়া যাবে না।

গর্ভবতী গাভীর বাসস্থান

গর্ভবতী গাভীর বাসস্থান

গর্ভবতী গাভীর খাদ্যঃ গর্ভাবস্থায় গাভীর মধ্যে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটে। তাই এসময় বাচ্চার সঠিক পুষ্টির জন্য কিছু বাড়তি খাবারের দরকার পরে যাতে গাভীর পুষ্টি চাহিদায় ঘাটতি না হয়। কারণ বাছুর যদি সুস্থ সবল না হয় তাহলে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দেবে এবং চিকিৎসা পথ্য কিনতে গেলে আরও লোকসান হতে পারে। তাই গর্ভবতী গাভীর খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া প্রয়োজন তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

 

১। যে রকম ফিড সরবরাহ করা উচিত – সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর ফিড সরবরাহ করতে হবে । এতে করে গাভী সহজেই হজম করতে পারবে এবং সেই সাথে পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে। 

 

২। উপযুক্ত ফিডস – এমতাবস্থায় সব ধরনের ফিড গাভীর জন্য উপযুক্ত নয়।  কিছু সহজ পাচ্য এবং মানেও পুষ্টিকর এমন ফিড উপযুক্ত হিসেবে গন্য হয়। যেমন- গমের ভুষি এবং তিসির তেল বীজ।

 

৩। রেশনের পরিমাণ – রেশন গাভীর পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহে অত্যন্ত সহায়ক। রেশনের DCP (Digestible Crude Protein) এবং  TDN (Total Digestible Nutrients) এর পরিমাণ যথাক্রমে ১৬-১৮% এবং ৭০% হতে হবে। 

 

৪। ৪০-৬০ গ্রাম  মিট এন্ড বীন,  ৪০ গ্রাম সাধারণ লবণ শস্য গুলিতে সংযোজক হতে পারে।

 

৫। ঘাস সরবরাহ – গাভীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে কাঁচা ঘাসের কোন বিকল্প নেই। একারণে ৫০-৬০% লিগিউম যুক্ত  সবুজ, নমনীয় ঘাসের পরিমাণ জন্মদানের পূর্বে শেষ তিন সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে গাভীর খাদ্য তালিকায় বাড়ানো উচিত।

 

৬। বকনা গাভীর খাদ্য ব্যবস্থা – গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে, বকনা গাভীদের বিশেষ খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। বংশবৃদ্ধির আগে বকনা গাভীদের জন্য প্রস্তাবিত ফিডিং এবং পরিচালনা অব্যাহত থাকতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসের মধ্যে যখন ভ্রূণের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়, তখন প্রায় ১-২ কেজি দানাদার জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করা উচিত।

 

৭। জন্ম দেয়ার পরপরই খাদ্য সরবরাহ – বাচ্চার জন্মের  পরপরই একটি বালতিতে কুসুম গরম পানির সাথে দেড় কেজি গমের ভুষি, আধাকেজি চিটাগুড়, ৫০ গ্রাম লবন মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিতে হবে। এরূপ খাদ্য খাওয়ালে গাভীর গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে সহায়তা করবে। তাছাড়া কুসুম গরম পানিতে শুধৃু ঝােলাগুড় মিশিয়েও গাভীকে খাওয়ানো যেতে পারে।  এইসময় গাভীকে তার বাচ্চার জন্য অনেক সতর্ক থাকতে হয় এবং বাচ্চা জন্মানোর ঘণ্টা দুয়েক পরপরই খাবার গ্রহণ শুরু করে।  

 

প্রসব অনেক আবেগঘন একটি মুহূর্ত। তাই এসময় কিছু বাড়তি যত্ন অনেক প্রয়োজন। গাভীর শরীরে কোন রকম পুষ্টি ঘাটতি যাতে না হয় এবং কোনো ভাবে আঘাত না পায় সে ব্যাপারে খামারীদের অবশ্যই নজর রাখতে হবে।